যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও রিপাবলিকান দলীয় নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও বিশ্ব বাণিজ্যে উত্তাপ ছড়ালেন। নতুন ঘোষণায় তিনি জানিয়েছেন, বাংলাদেশসহ ১৪টি দেশের রপ্তানি পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে কিছুটা সময়সীমা বাড়িয়ে আগামী ১ আগস্ট থেকে শুল্ক কার্যকর হবে।
ট্রাম্প এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর শীর্ষ নেতাদের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন, যার কিছু অংশ তিনি নিজের ট্রুথ সোশ্যাল মিডিয়ায়ও প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে পাঠানো চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, পহেলা আগস্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা হবে। এই শুল্ক খাতভিত্তিক চলমান শুল্কের বাইরে প্রযোজ্য হবে। এমনকি ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমেও পণ্য পাঠানো হলেও, সেক্ষেত্রেও এই শুল্ক কার্যকর হবে।
ট্রাম্প চিঠিতে লিখেছেন, “বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি বৈষম্যজনক। এ অবস্থার পরিবর্তন জরুরি। তবে, বাংলাদেশ যদি মার্কিন পণ্য উৎপাদনে বিনিয়োগ করে, তাহলে শুল্ক আরোপ করা হবে না।”
শুল্ক আরোপের পাশাপাশি একটি সুযোগও রেখেছেন ট্রাম্প। চিঠিতে তিনি আরও বলেন, “যদি বাংলাদেশ শুল্ক ও বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা তুলে নেয়, তাহলে এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা হতে পারে।”
ট্রাম্পের ঘোষণায় আরও বলা হয়েছে—
মিয়ানমার ও লাওস: ৪০% শুল্ক
থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া: ৩৬% শুল্ক
বাংলাদেশ ও সার্বিয়া: ৩৫% শুল্ক
ইন্দোনেশিয়া: ৩২%
দক্ষিণ আফ্রিকা: ৩০%
মালয়েশিয়া ও তিউনিসিয়া: ২৫%
জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া: আপাতত ২৫%, তবে পুনর্বিবেচনায় রয়েছে
ট্রাম্পের দাবি, “এই পদক্ষেপ বিদেশি প্রতিযোগিতা থেকে মার্কিন শিল্প ও কর্মসংস্থান রক্ষায় সহায়ক হবে।” যদিও অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, এই শুল্কের ফলে আমেরিকায় পণ্যের দাম বেড়ে যাবে এবং বিশ্ববাণিজ্য ব্যবস্থায় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
বাংলাদেশের পদক্ষেপ: বাংলাদেশ ইতিমধ্যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে একটি প্রতিনিধি দল ওয়াশিংটনে পাঠিয়েছে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের আগেই এ ধরনের ঘোষণা বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
প্রেক্ষাপট: এর আগে গত এপ্রিলে ট্রাম্প একই ধরনের শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন, যার আওতায় বাংলাদেশি পণ্যে ৩৭% শুল্কের কথা বলা হয়েছিল। পরে সেটি পিছিয়ে জুলাইয়ে কার্যকরের কথা জানানো হয়। এবার সময় বাড়িয়ে ১ আগস্ট করা হয়েছে।
বিশ্ব প্রতিক্রিয়া ও সম্ভাব্য প্রভাব: এই পদক্ষেপে বিশ্বব্যাপী প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়াসহ অনেক দেশ এই শুল্ক এড়াতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তির চেষ্টা করছে। ইতিমধ্যে যুক্তরাজ্য, ভিয়েতনাম ও চীনের সঙ্গে আংশিক চুক্তি হয়েছে বলেও হোয়াইট হাউস জানিয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশ যদি এখনই কৌশলগতভাবে আলোচনায় না বসে এবং বিকল্প রপ্তানি কৌশল তৈরি না করে, তাহলে এই শুল্ক রপ্তানিতে বড় আঘাত হানবে।