ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক একদম তলানীতে গিয়ে ঠেকেছে। সম্প্রতি দেশটির পণ্যের ওপর শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করার ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প। বারবার ভারতকে বন্ধুরাষ্ট্র বললেও এমন শুল্ক চাপানোর কারণ হিসেবে দেশটির রাশিয়ার তেল কেনা থেকে বিরত না থাকাকে দায়ী করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এমন পরিস্থিতিতে আজই জানা গেল, ভারত সফরে আসছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। আবার আগামী ৩১ আগস্ট চীন সফরে যাবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
বর্তমানে রাশিয়ার মস্কোয় অবস্থান করছেন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল। দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা সের্গেই শোইগুর সঙ্গে আলোচনার পর বৃহস্পতিবার তিনি জানিয়েছেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের ভারত সফর চূড়ান্ত হয়েছে। এতে দিল্লি খুবই আনন্দিত ও উত্তেজিত। ভারত ও রাশিয়ার শীর্ষ বৈঠক দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হবে। তাই আসন্ন এই বৈঠকের আলাদা তাৎপর্য রয়েছে। তবে এ সফর ঠিক কবে হচ্ছে, সে বিষয়ে কিছু জানাননি তিনি।
রুশ বার্তা সংস্থা ইন্টারফ্যাক্সকে উদ্ধৃত করে একই তথ্য জানিয়েছে রয়টার্সও। তাদের প্রতিবেদন বলছে, ভ্লাদিমির পুতিন চলতি বছরের শেষে ভারত সফরে আসবেন।
পুতিনের ভারত সফরের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেয়া এক পোস্টে মোদি বলেন, আমার বন্ধু প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে এক অত্যন্ত ভালো এবং বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। ইউক্রেন বিষয়ে সাম্প্রতিক যে উন্নয়নগুলো ঘটেছে, সেগুলো ভাগ করে নেয়ার জন্য আমি তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছি। আমরা আমাদের দ্বিপক্ষীয় কার্যসূচির অগ্রগতিও পর্যালোচনা করেছি এবং দুই দেশের মধ্যকার বিশেষ কৌশলগত অংশীদারত্ব আরো গভীর করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছি। চলতি বছরের শেষের দিকে প্রেসিডেন্ট পুতিনকে ভারতে স্বাগত জানানোর জন্য আমি অপেক্ষায় আছি।
এদিকে সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার (এসসিও) আঞ্চলিক সম্মেলনে অংশ নিতে আগামী ৩১ আগস্ট চীন সফরে যাচ্ছেন নরেন্দ্র মোদি। চীনের তিয়ানজিন শহরে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। চীনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের ভারসাম্যপূর্ণ এ পুনর্মূল্যায়নকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক ভারসাম্য রক্ষার কৌশল হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এনডিটিভি জানিয়েছে, ২০২০ সালে গালওয়ান উপত্যকায় চিরবৈরী দুই প্রতিবেশী ভারত-চীনের সামরিক বাহিনীর সদস্যদের সংঘর্ষের পর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে টানাপড়েন তৈরি হয়। নরেন্দ্র মোদির চীন সফরকে তাই দুই দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার আরেকটি পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সব মিলিয়ে ভারতের এমন পদক্ষেপে মোটেও খুশি নন ট্রাম্প। ভারতের সঙ্গে শুল্ক সমস্যা না মিটলে তাদের সঙ্গে বাণিজ্য নিয়েও কোনো আলোচনা হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।
অগাস্টের শেষে মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধিদলের ভারতে এসে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা করার কথা। এর আগে ট্রাম্প একাধিকবার বলেছেন, ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি শেষ পর্যায়ে আছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে দীর্ঘদিন ধরে দুই দেশের প্রতিনিধিদের মধ্যে আলোচনা চললেও চুক্তি চূড়ান্ত হয়নি।
সূত্র জানিয়েছে, অ্যামেরিকা চেয়েছিল, ভারত যেন কৃষি ও ডেইরি পণ্যে শুল্ক কমিয়ে দেয়। তাহলেই মার্কিন পণ্য দেশটিতে ঢুকতে পারবে। কিন্তু ভারত তাতে রাজি হয়নি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বৃহস্পতিবার বলেছেন, তিনি ভারতীয় কৃষক, পশুপালক, মৎস্যজীবীদের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হতে দেবেন না।
দর্পণ/এম এ