শোবিজ অঙ্গনে তাহসান-মিথিলার বিচ্ছেদ ছিল বহুল আলোচিত একটি ঘটনা। ২০১৭ সালে তাদের দাম্পত্য জীবনের আনুষ্ঠানিক ইতি ঘটে। তবে অভিনেত্রী রাফিয়াত রশিদ মিথিলা জানিয়েছেন, বিচ্ছেদের দুই বছর আগেই তারা আলাদা থাকতে শুরু করেছিলেন।
সম্প্রতি এশা রুশদীর ইউটিউব পডকাস্টে মিথিলা বলেন, ২০১৫ সাল থেকে আলাদা থাকা শুরু হলেও তিনি আশা করেছিলেন, সম্পর্কটি টিকে থাকবে। কিন্তু ২০১৭ সালে এসে সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হন যে, সম্পর্কটি আর সম্ভব নয়।
সে সময় মানসিক চাপের পাশাপাশি অর্থনৈতিক সংকটেও পড়েছিলেন তিনি। শ্বশুরবাড়ির পরিবেশ, সন্তান পালন ও নিজস্ব সচ্ছলতা না থাকায় এক কঠিন সময় পাড়ি দিতে হয় মিথিলাকে। ছোট একটি সন্তান ও সীমিত আয়ের চাকরি নিয়ে চলতে হতো তাঁকে। এমনকি ব্যক্তিগত গাড়িও ছিল না তার কাছে।
মিথিলা বলেন, মেয়েদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা জরুরি। তার মতে, নারীরা যদি নিজে উপার্জনক্ষম না হন, তাহলে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। তিনি জানান, মায়ের শিক্ষা ও নিজের অধ্যবসায়ের ফলে তিনি আজ নিজের জায়গা গড়তে পেরেছেন।
২০১৭ সালে সামাজিক মাধ্যমে এক যৌথ বিবৃতিতে তাহসান ও মিথিলা তাদের বিচ্ছেদের ঘোষণা দেন। সেখানে তারা লেখেন, দীর্ঘদিন একসঙ্গে পথচলার পর একসময় বুঝতে পারেন, দুজনের চিন্তা ও জীবনের চাহিদা ভিন্ন হয়ে গেছে। তাই পারস্পরিক সম্মতিতেই আলাদা হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তারা।
তাহসান-মিথিলার বিচ্ছেদ ছিল শোবিজ অঙ্গনের সবচেয়ে আলোচিত বিষয়গুলোর একটি। ২০১৭ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে আলাদা হয়ে যান এই তারকা দম্পতি। তবে অভিনেত্রী রাফিয়াত রশিদ মিথিলা জানিয়েছেন, তারও আগে—২০১৫ সাল থেকেই তারা আলাদা থাকতে শুরু করেছিলেন।
সম্প্রতি এশা রুশদীর ইউটিউব পডকাস্টে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে মিথিলা শেয়ার করেছেন সেই সময়ের কঠিন বাস্তবতা। তিনি বলেন, “আমি ভেবেছিলাম, সম্পর্কটা ঠিক হয়ে যাবে। দুই বছর আলাদা থাকলেও শেষ পর্যন্ত ভেঙে যাবে—এটা ভাবিনি। কিন্তু ২০১৭ সালে এসে বুঝি, সম্পর্কটা আর সম্ভব নয়।”
বিচ্ছেদের সময় তিনি ছিলেন খুবই তরুণ, এক সন্তানের মা এবং মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। পাশাপাশি ছিল অর্থনৈতিক অনিরাপত্তা। মিথিলা জানান, “২৩ বছর বয়স থেকে আমি আমার জীবনকে একটা নির্দিষ্ট পথে ভাবতাম। কিন্তু হঠাৎ করেই পুরো জীবনটা বদলে গেল। আমার একটা ছোট বাচ্চা, নিজের গাড়িও নেই, চাকরি করলেও সবকিছু সামলানো কঠিন ছিল।”
তিনি আরও বলেন, “আমি তখন শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সঙ্গে থাকতাম। ভেবেছিলাম, এটাই আমার ভবিষ্যৎ। কিন্তু হঠাৎ বুঝে গেলাম, সেই জায়গাটা আমার আর নয়।”
সেই সময় চাকরি এবং মাঝে মধ্যে নাটকে কাজ করে চলতে হয়েছে মিথিলাকে। অথচ সন্তান নিয়ে যাতায়াত করতে হতো গণপরিবহনে। ব্যক্তিগত গাড়ির অভ্যস্ততা থাকলেও তখন তা সম্ভব ছিল না।
এ প্রসঙ্গে মিথিলা বলেন, “মেয়েদের জন্য অর্থনৈতিক স্বাধীনতা সবচেয়ে জরুরি। এই স্বাধীনতা ছাড়া জীবনের বড় কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না। আমার মা সবসময় বলতেন—নিজের পায়ে দাঁড়াতে শিখো। সেই কথাই আমাকে সাহস জুগিয়েছে। আমি পড়াশোনা চালিয়ে গেছি, চাকরি করেছি—কিন্তু তখন আমি পুরোপুরি স্বনির্ভর ছিলাম না। সেই পর্যায়ে পৌঁছাতে অনেক সময় লেগেছে।”
২০১৭ সালে তাহসান ও মিথিলা যৌথভাবে ফেসবুকে বিচ্ছেদের ঘোষণা দেন। সেখানে তারা লেখেন, “আমরা একে অপরকে সম্মান করি, কিন্তু আমাদের জীবনযাত্রার দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন হয়ে গেছে।”
তাহসান তখন লিখেছিলেন, “সমাজ কী বলবে, এই ভয়ে সারা জীবন একটা সম্পর্ক টেনে নেব—এমন সিদ্ধান্ত আমরা কেউই নিতে চাইনি।”
আজ অনেকটা পথ পেরিয়ে এসে মিথিলা নিজের জন্য একটি স্থিতিশীল জীবন গড়েছেন। তার মতে, নারীদের শুধু সামাজিক স্বীকৃতি নয়, প্রয়োজন আত্মনির্ভরতা ও মানসিক শক্তি।