বুধবার, ০১ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:৫৭ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ
খুলনায় মৃত ৬জন সরকারি কর্মচারীর পরিবারকে ৪০ লাখ টাকার চেক হস্তান্তর মোল্লাহাটে মহাসড়কে যুবককে গুলি শরণখোলায় বিপুল উৎসাহ ও আনন্দমূখর পরিবেশে পালিত হচ্ছে শারদীয় দুর্গা উৎসব এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ও চিকিৎসাভাতা নিয়ে সুখবর ২২ মাসের বকেয়া বেতন ভাতা প্রদানের দাবিতে খুলনায় কর্মকর্তা কর্মচারীদের মানববন্ধন  গণভোট’ই সমস্যার সমাধান হতে পারে:-শেখ মোস্তাফিজুর রহমান খুলনায় ঘুমন্ত অবস্থায় যুবককে গুলি করে হত্যা পূর্ব সুন্দরবনের করমজলে কুমিরের আক্রমণে নিহত জেলের লাশ উদ্ধার মহেশপুর সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রয়াত শিক্ষকদের স্মরণ  সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত চরফ্যাশনে কৃতি শিক্ষার্থী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে নাজিম উদ্দিন আলম

নারীরা আজও নিকটতম মানুষের হাতেই বেশি অসহায়

শরণখোলা দর্পণ ডেস্কঃ / ১০৩ বার পড়া হয়েছে
সময়ঃ মঙ্গলবার, ২৪ জুন, ২০২৫, ৫:২৩ অপরাহ্ন

বাংলাদেশের নারীরা আজও তাদের নিকটতম মানুষের হাতেই সবচেয়ে বেশি অসহায়। একজন নারী, জীবনের কোনো না কোনো পর্যায়ে স্বামী বা সঙ্গীর হাতে সহিংসতার শিকার হয়েছেন—এমন অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের অগণন নারীর জীবনের এক নির্মম বাস্তবতা। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ও জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ)-এর যৌথভাবে পরিচালিত ‘নারীর প্রতি সহিংসতা জরিপ প্রতিবেদন ২০২৪’-এ উঠে এসেছে এক চমকে দেওয়া চিত্র-নারীর প্রতি ঘরোয়া সহিংসতা এখনো কতটা বিস্তৃত ও প্রকট।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, জীবদ্দশায় অন্তত একবার হলেও স্বামী বা সঙ্গীর হাতে শারীরিক, যৌন, মানসিক, অর্থনৈতিক সহিংসতা কিংবা নিয়ন্ত্রণমূলক আচরণের শিকার হয়েছেন—এমন নারীর হার সবচেয়ে বেশি বরিশাল বিভাগে, যেখানে এই হার প্রায় ৮২ শতাংশ।

দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে খুলনা বিভাগ, যেখানে নারীদের ৮১ শতাংশের অভিজ্ঞতা একই রকম। প্রতি পাঁচজনে চারজনেরও বেশি নারী নির্যাতিত হওয়ার অর্থ হলো, আমাদের ঘরগুলোই নারীর জন্য সবচেয়ে অনিরাপদ স্থান। 

অন্যদিকে তুলনামূলক কম সহিংসতার শিকার হয়েছেন সিলেট ও ঢাকা বিভাগের নারীরা, তবে ‘কম’ বললেও তা সান্ত্বনার কিছু নয়, এই দুই বিভাগেও প্রায় ৭৩ শতাংশ নারী এই অভিজ্ঞতা বয়ে বেড়াচ্ছেন। চট্টগ্রামে এ হার ৭৬ শতাংশ, ময়মনসিংহে ৭৫, রাজশাহীতে প্রায় ৭৫ এবং রংপুরে ৭৪ শতাংশ।

অর্থাৎ কোনো বিভাগেই এই হার ৭০ শতাংশের নিচে নামেনি, যা গোটা দেশের প্রেক্ষাপটে বিষয়টিকে করে তোলে আরো উদ্বেগজনক। এই সংখ্যাগুলো শুনতে হয়তো আমরা অভ্যস্ত, কিন্তু এর পেছনে লুকিয়ে থাকা বেদনা, ভয় ও লাঞ্ছনার গল্পগুলো কতটা জানি আমরা? 

জরিপে আরো একটি উদ্বেগজনক তথ্য উঠে এসেছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় নারীদের প্রতি সহিংসতার হার বেশি। দুর্যোগের সময় নারীরা শুধু বন্যা বা ঘূর্ণিঝড়ের সঙ্গে লড়াই করে না, লড়াই করতে হয় বাড়ির ভেতরের শত্রুর সঙ্গেও। অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, বাস্তুচ্যুত হওয়ার ভয় এবং সমাজের নিরাপত্তাব্যবস্থার দুর্বলতা নারীদের আরো বেশি অসহায় করে তোলে।

এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের পথ কী? শুধু আইন প্রণয়ন বা সচেতনতামূলক কর্মসূচি যথেষ্ট নয়। প্রয়োজন সামাজিক মানসিকতার আমূল পরিবর্তন। নারীকে সম্পদ নয়, মানুষ হিসেবে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলতে হবে। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে সমতা ও সম্মানের বীজ রোপণ করতে হবে পরিবার থেকেই। একই সঙ্গে, সহিংসতার শিকার নারীদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়, আইনি সহায়তা ও মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে।

আমরা যদি সত্যিই একটি উন্নত ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গড়তে চাই, তবে নারীর প্রতি সহিংসতার এই চক্র ভাঙতেই হবে। কারণ, একটি দেশ তখনই এগিয়ে যায়, যখন তার নারীরা নিরাপদ ও স্বাধীনভাবে বাঁচার অধিকার পায়। আজকের এই পরিসংখ্যান আমাদের জন্য এক জাগরণের ডাক—একটি সমাজ গড়ার ডাক, যেখানে নারীরা শুধু বেঁচে থাকবে না, গর্বিতভাবে বাঁচবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটেগরির আরো খবর
Theme Created By AR.Host