প্রিন্ট এর তারিখঃ অক্টোবর ১, ২০২৫, ৯:১০ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ জুন ২৪, ২০২৫, ৫:২৩ পি.এম
নারীরা আজও নিকটতম মানুষের হাতেই বেশি অসহায়
বাংলাদেশের নারীরা আজও তাদের নিকটতম মানুষের হাতেই সবচেয়ে বেশি অসহায়। একজন নারী, জীবনের কোনো না কোনো পর্যায়ে স্বামী বা সঙ্গীর হাতে সহিংসতার শিকার হয়েছেন—এমন অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের অগণন নারীর জীবনের এক নির্মম বাস্তবতা। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ও জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ)-এর যৌথভাবে পরিচালিত ‘নারীর প্রতি সহিংসতা জরিপ প্রতিবেদন ২০২৪’-এ উঠে এসেছে এক চমকে দেওয়া চিত্র-নারীর প্রতি ঘরোয়া সহিংসতা এখনো কতটা বিস্তৃত ও প্রকট।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, জীবদ্দশায় অন্তত একবার হলেও স্বামী বা সঙ্গীর হাতে শারীরিক, যৌন, মানসিক, অর্থনৈতিক সহিংসতা কিংবা নিয়ন্ত্রণমূলক আচরণের শিকার হয়েছেন—এমন নারীর হার সবচেয়ে বেশি বরিশাল বিভাগে, যেখানে এই হার প্রায় ৮২ শতাংশ।
দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে খুলনা বিভাগ, যেখানে নারীদের ৮১ শতাংশের অভিজ্ঞতা একই রকম। প্রতি পাঁচজনে চারজনেরও বেশি নারী নির্যাতিত হওয়ার অর্থ হলো, আমাদের ঘরগুলোই নারীর জন্য সবচেয়ে অনিরাপদ স্থান।
অন্যদিকে তুলনামূলক কম সহিংসতার শিকার হয়েছেন সিলেট ও ঢাকা বিভাগের নারীরা, তবে ‘কম’ বললেও তা সান্ত্বনার কিছু নয়, এই দুই বিভাগেও প্রায় ৭৩ শতাংশ নারী এই অভিজ্ঞতা বয়ে বেড়াচ্ছেন। চট্টগ্রামে এ হার ৭৬ শতাংশ, ময়মনসিংহে ৭৫, রাজশাহীতে প্রায় ৭৫ এবং রংপুরে ৭৪ শতাংশ।
অর্থাৎ কোনো বিভাগেই এই হার ৭০ শতাংশের নিচে নামেনি, যা গোটা দেশের প্রেক্ষাপটে বিষয়টিকে করে তোলে আরো উদ্বেগজনক। এই সংখ্যাগুলো শুনতে হয়তো আমরা অভ্যস্ত, কিন্তু এর পেছনে লুকিয়ে থাকা বেদনা, ভয় ও লাঞ্ছনার গল্পগুলো কতটা জানি আমরা?
জরিপে আরো একটি উদ্বেগজনক তথ্য উঠে এসেছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় নারীদের প্রতি সহিংসতার হার বেশি। দুর্যোগের সময় নারীরা শুধু বন্যা বা ঘূর্ণিঝড়ের সঙ্গে লড়াই করে না, লড়াই করতে হয় বাড়ির ভেতরের শত্রুর সঙ্গেও। অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, বাস্তুচ্যুত হওয়ার ভয় এবং সমাজের নিরাপত্তাব্যবস্থার দুর্বলতা নারীদের আরো বেশি অসহায় করে তোলে।
এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের পথ কী? শুধু আইন প্রণয়ন বা সচেতনতামূলক কর্মসূচি যথেষ্ট নয়। প্রয়োজন সামাজিক মানসিকতার আমূল পরিবর্তন। নারীকে সম্পদ নয়, মানুষ হিসেবে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলতে হবে। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে সমতা ও সম্মানের বীজ রোপণ করতে হবে পরিবার থেকেই। একই সঙ্গে, সহিংসতার শিকার নারীদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়, আইনি সহায়তা ও মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে।
আমরা যদি সত্যিই একটি উন্নত ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গড়তে চাই, তবে নারীর প্রতি সহিংসতার এই চক্র ভাঙতেই হবে। কারণ, একটি দেশ তখনই এগিয়ে যায়, যখন তার নারীরা নিরাপদ ও স্বাধীনভাবে বাঁচার অধিকার পায়। আজকের এই পরিসংখ্যান আমাদের জন্য এক জাগরণের ডাক—একটি সমাজ গড়ার ডাক, যেখানে নারীরা শুধু বেঁচে থাকবে না, গর্বিতভাবে বাঁচবে।
প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান সম্পাদক : শেখ মোহাম্মদ আলী।
সম্পাদক ও প্রকাশক :শেখ হাসান আল মাহমুদ
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক :মারুফা আলী
রায়েন্দা বাজার, শরণখোলা জেলা বাগেরহাট থেকে প্রকাশিত।
মোবাইল নম্বর ০১৭১১৯০৪২০৭,০১৩১৪০৯২৪৮৭।
ই-মেইল- sarankholadarpan@gmail.com
স্বত্ব © ২০২৫ শরণখোলা দর্পণ