
সৈকত মোঃ সোহাগ, খুলনা অফিস:
অবিলম্বে এফপিএবি’র দুর্নীতি-অনিয়ম বন্ধ এবং ২২ মাসের বকেয়া বেতন ভাতা সম্পূর্ণ পরিশোধ, বেতন ভাতা নিয়মিত প্রদানসহ বিভিন্ন দাবিতে পরিবার পরিকল্পনা সমিতি (এফপিএবি) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্যোগে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে।আজ বুধবার বেলা ১১টায় নগরীর শিববাড়ী মোড়ে মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধন ও সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন এফপিএবির খুলনা শাখার সভাপতি এ্যাড অচিন্ত্য কুমার দাশ।
বক্তব্য রাখেন খুলনা শাখার ট্রেজারার এ্যাড কুদরত-ই-খুদা, গণসংহতি আন্দোলন খুলনা জেলা আহবায়ক মুনীর চৌধুরী সোহেল, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) খুলনা মহানগর কমিটির সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান বাবু প্রমুখ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, খুলনাসহ সারাদেশে অবস্থানরত এফপিএবির হাজার হাজার কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ২২ মাসের বেতন পাচ্ছেন না। এটা অত্যন্ত অমানবিক ঘটনা। এফপিএবি একটি আন্তর্জাতিক ও পুরোনো প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে ভুমিকা অপরিসীম। এজন্য এ প্রতিষ্ঠানকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।
বক্তারা আরো বলেন এ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থেকে এসব কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা সেবামূলক কাজ করে যাচ্ছেন। অথচ তারা পরিবার পরিচালনার জন্য বহু মাস বেতন থেকে বঞ্চিত।
বক্তারা বলেন, আইন ও গঠনতন্ত্র মেনে পরিচালনা পর্ষদ গঠন ও প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতে হবে। কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের স্বার্থ রক্ষার জন্য সমাজসেবা ও এনজিও ব্যুরোকে দেখভাল করতে হবে। পরিচালনা কমিটির দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে দাতা সংস্থা অর্থ বরাদ্দ থেকে দূরে সরে গেছে। এফপিএবির কার্যক্রম ও গতিশীল করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে কার্যকর ভ‚মিকা নিতে হবে।
সমাবেশে বিক্ষোভকারীরা অভিযোগ করেন, মাসের পর মাস আমরা বেতন ভাতা পাচ্ছি না। পেশাগত জীবনে আমরা এক অনিশ্চিত জীবনের হাতছানি দেখতে পাচ্ছি। আর কতদিন এভাবে বেতন ছাড়া চাকরী করবো? আমরা বিনা কারণে দুর্দশায় ভুগছি। বেতনের পাশাপাশি আমরা চাকরী হারাবো কিনা সেটা নিয়েও দুশ্চিন্তায় আছি।
তারা জানান, ২০১৫ সাল থেকে ২০১৯ সাল এবং ২০২২ সাল থেকে অদ্যাবধি এফপিএবি’র কেন্দ্রীয় পরিচালনা কমিটির অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা এবং কতিপয় চিহ্নিত স্বার্থান্বেষী স্বেচ্ছাসেবক ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় আইপিপিএফ এর গঠনতন্ত্র অমান্য করে নির্বাচন ও পুতুল কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করায় আইপিপিএফ এর কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে ফান্ড সাময়িক বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে বাংলাদেশের ২১ জেলার এফপিএবি’র কর্মরত কর্মকর্তা, কর্মচারীদের বেতন বন্ধ রয়েছে।
বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সমাবেশে বলেন, মাসের পর মাস বেতন না পাওয়ায় অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করছি। সন্তানদের শিক্ষাব্যয়সহ সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি। অসুস্থ পিতামাতা, সন্তানসহ পরিবারের কোনো সদস্যকে চিকিৎসা করাতে পারছি না। সাবেক ও বর্তমান কেন্দ্রীয় সভাপতি, দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের চরম দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতায় আমাদের জীবন ওষ্ঠাগত। সমাবেশে ক্ষোভ প্রকাশ করে কর্মকর্তারা জানান, ১৯৫৩ সাল থেকে এই প্রতিষ্ঠান হিসাবে গ্রামীণ ও প্রান্তিক পর্যায়ে যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা, মা ও শিশু স্বাস্থ্যসেবা, বয়ঃসন্ধিকালীন ̄স্বাস্থ্যসেবা, বিভিন্ন সামাজিক অবক্ষয় রোধে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষে কাজ করে আসছে। এফপিএবি একটি অরাজনৈতিক ও অলাভজনক স্বেচ্ছাসেবী সেবামূলক প্রতিষ্ঠান যা’ দাতা সংস্থা আইপিপিএফ এর গঠনতন্ত্র ও নিয়ম কানুন অনুযায়ী পরিচালিত হয়ে আসছে। তারা বলেন, বিগত ২০১৫ সালের ডিসেম্বর থেকে ফ্যাসিবাদী সরকারের অবৈধ এমপি এবং কিছু ̄স্বার্থান্বেষী স্বেচ্ছাসেবক ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় আইপিপিএফ এর গঠনতন্ত্র বহির্ভূত নির্বাচন ও কমিটি দখলের কারণে আইপিপিএফ তাদের ফান্ড সাময়িক বন্ধ রাখে। তখন সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ২৩ মাসের বেতন বকেয়া থেকে যায়। ২০১৯ সালে আইপিপিএফ এর সাথে পুনরায় সকল সমস্যার সমাধান হলে আবার ফান্ড চালু হয়। তখন থেকে সকল বেতন ভাতা পাওয়া শুরু করে। কিন্তু দাতা সংস্থা বেশ কিছু সংস্কার প্রস্তাব দেয়, যা তদানিন্তন কমিটি সংস্কার প্রস্তাব উপেক্ষা করে। বর্তমানে কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার কারণে প্রশাসক মহোদয় নির্বাচনের তারিখ নিয়ে তালবাহানা শুরু করেন। পরবর্তিতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতিবাদের মুখে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেন।
২০২৪ সালে আইপিপিএফ এর নিয়ম অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, যার প্রধান লক্ষ ছিল আইপিপিএফ এর সদস্য পদ ফিরিয়ে নিয়ে আসা, সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এযাবৎকালের সকল বকেয়া বেতন ভাতা পরিশোধ করা, নিয়মিত বেতন ভাতার ব্যবস্থা করা। কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা আরো বলেন, কিছু অসাধু ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার নিলনকশা বাস্তবায়নের জন্য তারা বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের সাবেক এমপি ও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যের জেষ্ঠ্য পুত্র সাবেক রাষ্ট্রদূত মসয়ূদ মান্নান এফপিএবির কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্বাচিত করেন। কিন্তু তিনি কমিটির মেয়াদ ৮ মাস পার হয়ে গেলেও নির্বাচনের লক্ষ বাস্তবায়নে কোনো ভ‚মিকা পালন করেননি। সমাবেশে বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা অবিলম্বে তাদের বেতন ভাতা প্রদান, প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম, দুর্নীতি বন্ধের দাবি জানান।