বৃহস্পতিবার, ০২ অক্টোবর ২০২৫, ১২:৪০ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
খুলনায় মৃত ৬জন সরকারি কর্মচারীর পরিবারকে ৪০ লাখ টাকার চেক হস্তান্তর মোল্লাহাটে মহাসড়কে যুবককে গুলি শরণখোলায় বিপুল উৎসাহ ও আনন্দমূখর পরিবেশে পালিত হচ্ছে শারদীয় দুর্গা উৎসব এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ও চিকিৎসাভাতা নিয়ে সুখবর ২২ মাসের বকেয়া বেতন ভাতা প্রদানের দাবিতে খুলনায় কর্মকর্তা কর্মচারীদের মানববন্ধন  গণভোট’ই সমস্যার সমাধান হতে পারে:-শেখ মোস্তাফিজুর রহমান খুলনায় ঘুমন্ত অবস্থায় যুবককে গুলি করে হত্যা পূর্ব সুন্দরবনের করমজলে কুমিরের আক্রমণে নিহত জেলের লাশ উদ্ধার মহেশপুর সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রয়াত শিক্ষকদের স্মরণ  সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত চরফ্যাশনে কৃতি শিক্ষার্থী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে নাজিম উদ্দিন আলম

মৃত ব্যক্তির বাড়িতে গিয়ে কান্না করাই যাদের পেশা

দর্পণ ডেস্ক / ২২ বার পড়া হয়েছে
সময়ঃ রবিবার, ২০ জুলাই, ২০২৫, ৩:৫৫ অপরাহ্ন

ভারতের রাজস্থানে বিচিত্র পেশার এক সম্প্রদায় বসবাস করেন। তাদের কাজ হলো মৃত ব্যক্তির জন্য চোখের জল, শোকের অনুষ্ঠানে গিয়ে কান্নার অভিনয় করা বা শোক প্রকাশ করা। এই সম্প্রদায়ের নাম ‘রুদালি’, যার আক্ষরিক অর্থই হলো ‘কান্নারত নারী’
এই পেশায় মূলত নারীরাই জড়িত। বহুকাল ধরেই ওই সম্প্রদায়ের নারীদের একমাত্র পেশা এটি। তাদের কাজ হচ্ছে সমাজের উচ্চবর্গের কেউ মারা গেলে তারা তার বাড়িতে গিয়ে বিলাপ করে, বুক চাপড়ায়, চোখের জল ফেলেন এবং সেইভাবে শোক প্রকাশ করেন, যা পরিবার নিজেরা প্রকাশ করতে পারে না বা করেন না। একদিকে এটা একটি সামাজিক রীতি, অন্যদিকে এটি একটি প্রাচীন পেশাও বটে।
সাধারণত রুদালিরা সমাজের নিম্নবর্ণ বা দরিদ্র শ্রেণির নারীরা। অনেকেই বিধবা, নিঃস্ব বা পরিবারের দ্বারা ত্যাগ করা। এই পেশার মাধ্যমে তারা কিছু টাকা আয় করেন। কিন্তু এই কাজ খুব সম্মানের নয় বলে সমাজে তারা অনেক সময় অবজ্ঞার চোখেও দেখেন।
রুদালি প্রথার মূল উৎপত্তি সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোনো ইতিহাস নেই। তবে গবেষকরা মনে করেন, এই প্রথা মূলত রাজস্থান ও পশ্চিম ভারতের গ্রামীণ এলাকা, বিশেষ করে ঠাকুর বা রাজপুত সমাজে গড়ে ওঠে। এই সমাজে বিশেষ করে পুরুষরা, নিজেদের আবেগপ্রকাশকে দুর্বলতা মনে করতেন। মৃত্যুর পরও তারা প্রকাশ্যে কান্না বা শোক প্রকাশ করতেন না। সমাজে মর্যাদা বা সামাজিক ইমেজ নষ্ট হতে পারে, এই ভয় ছিল। তাই উচ্চবর্গীয় পরিবারগুলোতে পেশাদার নারীদের আনা হতো, যারা বিলাপ করে মৃতের জন্য শোক প্রকাশ করতেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই নারীরা সমাজে পরিচিতি পায় ‘রুদালি’ নামে।
রুদালিরা শুধু কাঁদেন না। তারা উচ্চস্বরে বিলাপ করেন, মৃতের গুণগান করেন, বুক চাপড়ান, কখনো কখনো মাটিতে গড়াগড়িও দেন। পুরোটা একধরনের পারফরমেন্স যা ঐতিহ্যগত শোকের প্রকাশ।
এই নারীরা স্থান পেয়েছে নানান সময় সাহিত্য ও সিনেমায়। রুদালি বিষয়টি প্রথম আন্তর্জাতিকভাবে আলোচনায় আসে মহাশ্বেতা দেবীর লেখা বাংলা গল্প ‘রুদালি’ (১৯৭৯)-এর মাধ্যমে। পরে এটি হিন্দি ভাষায় অনুবাদ হয়।
মহাশ্বেতা দেবীর লেখার ভিত্তিতে ১৯৯৩ সালে বিখ্যাত পরিচালক কাল্পনা লাজমি নির্মাণ করেন হিন্দি সিনেমা ‘রুদালি’, যেখানে মুখ্য চরিত্রে ছিলেন ডিম্পল কাপাডিয়া। এই সিনেমায় রুদালি নারীর সামাজিক অবস্থা, নিপীড়ন, অভাব এবং পেশার জটিলতা তুলে ধরা হয়। এটি সিনেমাটি ব্যাপক প্রশংসা পায়।
বর্তমানে রুদালি প্রথা প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। শহরাঞ্চলে এই ধরনের শোকপ্রকাশ অপ্রচলিত হয়ে গেছে। এছাড়া টেলিভিশন, সোশ্যাল মিডিয়া ও শিক্ষার প্রসার এই ধরনের প্রথার প্রয়োজনীয়তাও কমিয়ে দিয়েছে। তবে রাজস্থানের কিছু গ্রামীণ এলাকায় এখনো এই প্রথা দেখা যায়, বিশেষ করে ধনী পরিবারের মৃত্যুতে।
আজ হয়তো এই প্রথা প্রায় বিলুপ্তির পথে, কিন্তু এর গল্প এক অনন্য স্থান রাখবে ইতিহাসে। সূত্র: বিবিসি নিউজ।
দর্পণ/এম এ


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটেগরির আরো খবর
Theme Created By AR.Host