আলীবান্দা ইকোট্যুরিজম পর্যটন কেন্দ্রে এক কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ফুটট্রেইল
।।শেখ মোহাম্মদ আলী।।
পর্যটনের অপার সম্ভাবনা হিসেবে গড়ে উঠেছে পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের আলীবান্দা ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্র। কম সময়ে অল্প খরচে সুন্দরবন ভ্রমণে আগ্রহী পর্যটকদের কাছে আকর্ষনীয় পর্যটনস্পট হতে পারে আলীবান্দা ইকোট্যুরিজম কেন্দ্র ও সুপতি অভয়ারণ্য কেন্দ্র। ডে-ট্যুরে পর্যটকেরা সুন্দরবনসহ সাগর মোহনার বিশাল বলেশ্বর নদীর নৈসর্গিক ও জেলেদের ইলিশ শিকারের দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হবেন।
লোকালয় তথা শরণখোলা রেঞ্জ সদরের ঘাট থেকে নদী পথে ইঞ্জিন চালিত ট্রলারে আলীবান্দায় যেতে সময় লাগে মাত্র ৫০ মিনিট। আলীবান্দা থেকে সুপতি অভয়ারণ্য কেন্দ্রে যেতে সময় লাগে ঘন্টা দেড়েক। পর্যটকদের সুন্দরবনের নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখার জন্য আলীবান্দা ইকোট্যুরিজম পর্যটন কেন্দ্রে নির্মাণ করা হয়েছে ৫০ফুট উচ্চতার ওয়াচ টাওয়ার। নির্মীত হয়েছে নিরাপদে হেটে বন দেখার জন্য এক কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে ফুটট্রেইল। এছাড়া আলীবান্দায় নির্মাণ করা হয়েছে পর্যটকদের জন্য পাবলিক টয়লেট, গোলঘর, স্যুভেনির শপ, টিকেট কাউন্টার, ঢালাই জেটি, পাকা রাস্তা, কাটা হয়েছে কুমির রাখার জন্য দুটি পুকুর, হরিণ রাখার জন্য করা হয়েছে লোহার বেষ্টনি ও সেড।লোকালয়ের এতো কাছাকাছি আলীবান্দায় ইকোট্যুরিজম পর্যটন কেন্দ্র গড়ে ওঠায় দিন দিন পর্যটকদের আগ্রহের কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত হয়েছে আলীবান্দা।
যেভাবে যাওয়া যায় আলীবান্দাঃ ঢাকাসহ অন্যান্য স্থান থেকে ডে-ট্যুরে অল্প সময়ে সুন্দরবনের আলীবান্দা ঘুরে যাওয়া যায়। ঢাকা (সায়দাবাদ) থেকে রাত ৯ টায় শরণখোলাগামী যাত্রীবাহী পরিবহন বাসযোগে ভোররাতে শরণখোলা বাজারে নামতে হবে। এর পরে সকালে শরণখোলা রেঞ্জ অফিস গিয়ে বনবিভাগের নির্ধারিত রাজস্ব পরিশোধ করে ইঞ্জিনচালিত ট্রলারে চেপে সকাল ৯টার মধ্যে আলীবান্দা যাওয়া যায়। আলীবান্দায় ঘন্টা খানেক অবস্থান শেষে ভোলা নদী দিয়ে সুন্দরবনের গহীনে সুপতি অভয়ারণ্য কেন্দ্রে যেতে হবে। সুপতি ঘুরে বঙ্গোপসাগর মোহনায় বিশাল বলেশ^র নদী দিয়ে সুন্দরবনের আরেকটি স্পট বগী ফরেষ্ট ষ্টেশন দেখে বিকেল ৫টার মধ্যে শরণখোলায় ফেরা সম্ভব। শরণখোলা থেকে সন্ধ্যা ৬/৭ টার বাসে চেপে রাত ১ টায় ঢাকা পৌছানো যায়। ঢাকার চাকুরিজীবিরা এক্ষেত্রে সুন্দরবনে ডে-ট্যুরে শুক্রবার ছুটির দিনটি কাজে লাগাতে পারে। যেমন বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা থেকে রওয়ানা হয়ে শুক্রবার সারাদিন সুন্দরবনে ঘোরাফেরা করে শুক্রবার সন্ধ্যার বাসে চেপে শনিবার সকালে ঢাকায় পৌছানো সম্বব।
বনবিভাগ সূত্রে জানা যায়, অদুর ভবিষ্যতে সুন্দরবনের গহীনের পর্যটনস্পট কটকা, কচিখালী, হিরণপয়েন্ট, দুবলারচরসহ অন্যান্য পর্যটনস্পটে পর্যটকদের যাওয়া নিষিদ্ধ করা হবে। সে লক্ষ্যে সুন্দরবন বিভাগ লোকালয়ের কাছাকাছি সুন্দরবনে ইকোট্যুরিজম পর্যটন কেন্দ্র চালু করার প্রকল্প গ্রহণ করে। চার বছর মেয়াদী এ প্রকল্পের আওতায় পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের আলীবান্দা, চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর, হাড়বাড়িয়া ও আন্ধারমানিক নামক স্থানে ইকোট্যুরিজম পর্যটন কেন্দ্র করা হয়েছে। ইতিমধ্যে হাড়বাড়িয়া ও আন্ধারমানিক ইকোট্যুরিজম পর্যটন কেন্দ্র দুটি পুরোদমে চালু করা হয়েছে।
আলীবান্দা ইকোট্যুরিজম পর্যটন কেন্দ্রের সুউচ্চ ওয়াচ টাওয়ার##
সুন্দরবনের ট্যুর অপারেটর শরণখোলার রাসেল আহমেদ বলেন, অপার সম্ভাবনার আলীবান্দা ইকোট্যুরিজম পর্যটন কেন্দ্র চালু হলে এখানে পর্যটকের ঢল নামবে। ঢাকাসহ অন্যান্য এলাকার পর্যটকেরা অতি অল্প সময়ে কম খরচে সুন্দরবনের এই এলাকা ভ্রমণ করে যেতে পারবে এবং সুন্দরবনের অন্যান্য পর্যটনস্পটের চেয়ে আলীবান্ধায় যেতে সবচেয়ে কম খরচ হবে বলে তিনি জানান।
পূর্ব সুন্দরবন বন বিভাগ বাগেরহাটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ( ডিএফও) মোঃ রেজাউল করীম চৌধুরী “শরণখোলা দর্পণ”কে বলেন, আলীবান্দায় ইকোট্যুরিজম পর্যটন কেন্দ্রের কাজ এখন শেষ পর্যায়ে। ইতোমধ্যে সেখানে বনরক্ষীদের থাকার জন্য ষ্টাফ ব্যারাক নির্মাণ করে বনরক্ষী পোষ্টিং দেওয়া হয়েছে। এখন নির্মীত বেষ্টনীতে হরিণ ও পুকুরে কুমির ছাড়ার প্রস্ততি চলছে। শীঘ্রই আলীবান্দা ইকোট্যুরিজম পর্যটন কেন্দ্র পর্যটকদের জন্য পুরোপুরি খুলে দেওয়া যাবে বলে ডিএফও জানিয়েছেন।##