সিলেটের এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ঘটে গেলো মর্মান্তিক এক ঘটনা। হাসপাতালের দ্বিতীয় তলার বারান্দায় একসঙ্গে দুই প্রসূতির সন্তান জন্ম দেন, যেখানে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা তো দূরে থাক, একটি কাপড় পর্যন্ত মেলেনি তাদের আড়াল করার জন্য। ঘটনার সময় এক নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। বিষয়টি তুলে এনেছে হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা ও মানবিকতা নিয়ে গভীর প্রশ্ন।
ঘটনাটি ঘটে বুধবার (২ জুলাই) বিকেলে, হাসপাতালের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের সামনে। প্রসূতিরা হলেন—সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সুমি বেগম (১৯) ও গোলাপগঞ্জ উপজেলার সুপ্রিতা রানী দাস (২৫)।
পরিবারের সদস্যদের ভাষ্যমতে, প্রসব ব্যথা ওঠার পর ওয়ার্ডে প্রবেশ করতে চাইলেও সেবিকারা সহযোগিতা করেননি। বারবার জানালেও বিষয়টি গুরুত্ব পায়নি। শেষ পর্যন্ত হাসপাতালের বারান্দায় অন্য রোগীর স্বজন ও উপস্থিত নারীদের সহায়তায় প্রসব হয়।
সুমি বেগমের মা জানান, তার মেয়ে মাত্র ৬ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। সময়ের আগেই সন্তান প্রসব ও যথাযথ চিকিৎসা না পাওয়ায় নবজাতকটি মারা যায়। আরেক প্রসূতি সুপ্রিতা রানীও একই জায়গায় বারান্দায় সন্তান প্রসব করেন, সেখানেও চিকিৎসাসেবা ছিল না বললেই চলে।
এ বিষয়ে হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সৌমিত্র চক্রবর্তী জানান, প্রসূতি ওয়ার্ডে চাপ থাকায় হয়তো ঘটনাটি দ্রুত নজরে আসেনি। তার ভাষায়, হাসপাতালটিতে প্রতিদিন ২৫–৩০ জন প্রসূতি একসঙ্গে ভর্তি হন, যেখানে শয্যা সংখ্যা মাত্র ৫টি। তিনি দাবি করেন, চিকিৎসক ও সেবিকারা দায়িত্বে ছিলেন, কিন্তু ওই দুই প্রসূতির জরুরি অবস্থা ভিড়ের কারণে নজর এড়াতে পারে
ডা. সৌমিত্র আরও জানান, বারান্দায় সন্তান জন্ম দেওয়া দু’জন প্রসূতির মধ্যে একজনের নবজাতক অকালপ্রসূ হওয়ায় বাঁচানো সম্ভব হয়নি, তবে মা সুস্থ। অন্যজন এবং তার সন্তান দু’জনেই ভালো আছেন এবং দ্রুত ছাড়পত্র দেওয়া হবে।
তবে এমন ঘটনায় জনমনে উঠেছে প্রশ্ন ও ক্ষোভ—এমন একটি সরকারি বিশেষায়িত হাসপাতালে বারান্দায় সন্তান জন্মদানের মতো পরিস্থিতি কীভাবে সম্ভব? চিকিৎসা ব্যবস্থার এই বাস্তবতা হয়তো ভবিষ্যৎ মা ও শিশুদের জীবন নিয়ে আরও গভীর চিন্তার বার্তা দেয়।
na