মো,খলিলুর রহমান শাহিন,বরগুনা জেলা প্রতিনিধি:
দেশের সব স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা পর্যায়ক্রমে জাতীয়করণের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। মাদ্রাসাগুলোর প্রথম ধাপের জাতীয়করণের আওতায় বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলায় ৫টি ইবতেদায়ী মাদ্রাসা জাতীয়করণের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। জাতীয়করণের তালিকায় থাকা এ পাচঁ মাদ্রাসা নিয়ে অনুসন্ধানে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য- প্রতিষ্ঠান গুলোতে ভাঙ্গাচোরা একটি টিনের ঘর ছাড়া কোনোটিতেই নেই ছাত্র-ছাত্রী, নেই শিক্ষা উপকরণ, এমনকি নেই ক্লাস নেওয়ার মতো ভবনও। শুধু কাগজে-কলমে চলছে এসব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম।
পাথরঘাটায় যে পাচঁটি মাদ্রাসা জাতীয়করণের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে সেগুলো হল- পাথরঘাটার চরদুয়ানী ইউনিয়নের গাববাড়ীয়া অফেজিয়া স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদ্রাসা, পাথরঘাটা সদর ইউনিয়নের উত্তর হাতেমপুর স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদ্রাসা, কালমেঘা ইউনিয়নের লাকুরতলা রশিদিয়া স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদ্রাসা, কাকচিড়া ইউনিয়নের পশ্চিম কাটাখালি স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদ্রাসা, রায়হানপুর ইউনিয়নের রায়হানপুর ইসলামিয়া স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদ্রাসা।
সরেজমিনে মাদ্রাসাগুলো ঘুরে দেখা যায় এইসব মাদ্রাসা গুলো বন্ধ রয়েছে। প্রতিষ্ঠান গুলোতে নেই কোনো স্থায়ী ভবন, পাঠ্যপুস্তক, শিক্ষা উপকরণ বা পাঠদান কার্যক্রম। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের অনেককেই এলাকাবাসী চেনেন না। স্থানীয় একজন অভিভাবক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আমাদের এলাকায় মাদ্রাসার নাম আছে, কিন্তু এখানে কোনো ক্লাস হয়না। আমার বাচ্চা প্রাইমারি স্কুলে পড়ে, মাদ্রাসার শিক্ষকরা তাদের শিক্ষার্থীর তালিকায় আমার বাচ্চার নাম রেখেছে। তিনি আরো বলেন মাদ্রাসার আশে পাশের অনেকে শিক্ষার্থীর নাম তাদের তালিকা রয়েছে মাদ্রাসা শুধু কাগজে-কলমে ঠিক আছে, কিন্তু বাস্তবে কিছু নেই। তিনি বলেন, মাঝে মাঝে দু-একজন শিক্ষক আসতে দেখা যায়, কিছুক্ষণ থেকে তারা আবার চলে যান।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ভুয়া নথিপত্র বানিয়ে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের প্রভাব খাটিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নেয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক তালিকা কাগজে তৈরি করে তাতে ভুয়া স্বাক্ষর সংযুক্ত করা হয়েছে। দুর্নীতিপূর্ণ যাচাই-বাছাই তদারকি কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে পরিদর্শন রিপোর্টে ইতিবাচক মন্তব্য লেখা হয়েছে। শিক্ষার্থীর তালিকায় যে নামগুলো রয়েছে, সেগুলোর অধিকাংশই কাল্পনিক বা অন্য স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীর নাম। স্থানীয়দের কাছে মাদ্রাসার অস্তিত্ব অজানা; কেবল সরকারি নথিতে এর নাম রয়েছে। জাতীয়করণকৃত মাদ্রাসার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে শিক্ষক বেতন, অবকাঠামো উন্নয়ন, ও শিক্ষা উপকরণ বাবদ লাখ লাখ টাকা বরাদ্দ হয়। কিন্তু এই টাকা কাগজে-কলমে খরচ দেখিয়ে আত্মসাৎ হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয় সচেতন নাগরিকরা বলছেন, মানসম্মত শিক্ষা ও শিক্ষকরা ন্যায্য বেতন পান সরকারের এই উদ্যোগের সুযোগকে কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি ও দুর্নীতিবাজ মহল নামমাত্র প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে অবৈধভাবে সরকারি অর্থ আত্মসাতের মাধ্যম বানিয়েছে। পাথরঘাটায় ৫টি নাম সর্বস্ব ইবতেদায়ী মাদ্রাসা জাতীয়করণের ঘটনা শুধু স্থানীয় নয়, বরং জাতীয় পর্যায়ে শিক্ষাব্যবস্থার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার প্রশ্ন উঠেছে। এসব ভুয়া মাদ্রাসার বিরুদ্ধে কঠোর তদন্ত ও জড়িতদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন সচেতন নাগরিকরা।
পাথরঘাটা উপজেলা দুর্ণীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মীর্জা শহীদুল ইসলাম খালেদ বলেন, এসব প্রতিষ্ঠানগুলো জাতীয়করণের আগে সরকারের মাঠপর্যায়ে কঠোরভাবে যাচাই-বাছাই করা উচিত ছিল। বাস্তবে এসব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম না থাকলে তদন্ত করে সরকারের ব্যবস্থা নেয়া উচিত এবং এর সাথে জড়িত কর্মকর্তা ও ব্যক্তিদের শাস্তির আওতায় আনা উচিত।’
পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো, মিজানুর রহমান বলেন, স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা জাতীয়করণের সিদ্ধান্ত সরকারের। এটি কেবল জাতীয়করণের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এগুলো চুড়ান্ত যাচাই বাছাইয়ে সরকারি ভাবে আমাদের কাছে তথ্য চাইলে মাঠপর্যায়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।