খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার দিঘলিয়া গ্রামের মনির মোল্লা ক্লাস্টার পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। এক সময় অভাব-অনটনের সঙ্গে লড়াই করা এই মানুষটি আজ আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর মাছ চাষের মাধ্যমে নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করেছেন। একই সঙ্গে এলাকার অন্যান্য মৎস্যচাষীদের জন্য তিনি দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছেন।
মনির মোল্লা জানান, “দীর্ঘদিন ধরে তিনি প্রচলিত পদ্ধতিতে মাছ চাষ করলেও তেমন লাভবান হচ্ছিলেন না। পরে উপজেলা মৎস্য অফিসারের পরামর্শে তিনি ক্লাস্টার পদ্ধতিতে মাছ চাষ শুরু করেন। এ পদ্ধতিতে কয়েকজন চাষি একত্রে নির্দিষ্ট এলাকায় ঘের তৈরি করে বৈজ্ঞানিক উপায়ে মাছ চাষ করেন। ফলে একদিকে খরচ কম হয়, অন্যদিকে উৎপাদন বাড়ে। তিনি বলেন, প্রথমদিকে কিছুটা শঙ্কা থাকলেও এখন আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, ক্লাস্টার পদ্ধতিতে মাছ চাষ লাভজনক ও টেকসই। বর্তমানে আমার ঘেরে রুই, কাতলা, মৃগেলসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ রয়েছে। প্রতিবছর এখান থেকে কয়েক লক্ষ টাকা আয় হয়।
মনির মোল্লা আরও বলেন, মাছ চাষ করে তিনি শুধু নিজের সংসারই চালাচ্ছেন না, স্থানীয় কয়েকজন যুবকের কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা করেছেন। মাছের পরিচর্যা, মাছ ধরা, মাছকে খাওয়ানো ও ঘের পরিচর্যার কাজে তাদের নিয়মিত যুক্ত রাখা হয়েছে।”
মনির মোল্লা ১৯৯২ সালে খুলনার দৌলতপুর ডে নাইট কলেজ থেকে ডিগ্রি পাস করেন, তিনি ১৯৮৮ সাল পড়াশোনার পাশাপাশি পরিবারকে সহযোগিতা করার জন্য টিউশনি করতেন। তিনি ডিগ্রী পাসের পরে গ্রামীণ ব্যাংকের খামার ব্যবস্থাপনা চাকরি পান। পরবর্তীতে তিনি ২০০৬ সালে চাকরি ছেড়ে দিয়ে মাছ চাষের দিকে ঝোকেন। মনির মোল্লা পরিবারের সদস্য সংখ্যা বর্তমান চারজন এক ছেলে এক মেয়ে এবং তার স্ত্রীকে নিয়ে তার বর্তমান সংসার। ছেলে দৌলতপুর ওয়ালটন শোরুমে চাকরি করেন এবং অনার্সে পড়াশোনা করছেন।
মনির মোল্লা আরো বলেন তার বর্তমান ১০০শতক জমির উপর, তার ঘেরে মাছের পাশাপাশি ধান এবং চাষ করে থাকেন । তার ঘেরে পাঁচজন কর্মচারী আছেন মনির মোল্লা আরো বলেন তার ঘেরে বছরে খরচ বাদ দিয়ে সাত থেকে আট লাখ টাকা লাভ করেন যা দিয়ে তার সংসার খুব ভালোভাবে চলে।
উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, ক্লাস্টার পদ্ধতিতে মাছ চাষ করলে রোগবালাই কম হয়, ব্যবস্থাপনা সহজ হয় এবং বাজারজাতকরণেও সুবিধা হয়। ফলে চাষিদের আর্থিক সচ্ছলতা বাড়ে।
সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রজেক্ট এর আওতায় ২৫ জন মৎস্য চাষী নিয়ে একটি ক্লাসটার গঠন করা হয়। যার সভাপতি মোঃ মনিরুল ইসলাম। উক্ত ক্লাসটারের ২৫ টি ঘেরে নিজস্ব টাকায় ঘের খনন ও বায়ো সিকিউরিটির ব্যবস্থা করার পর সরকার প্রায় অর্ধ কোটি টাকার চেক প্রদান করে এবং প্রশিক্ষণ প্রদান করে। ওই টাকা দিয়ে ২৫ জন মৎস্য চাষী মৎস্য দপ্তরের নিয়ম মেনে তিন বছর যাবত উন্নত সনাতন পদ্ধতিতে চিংড়ি মাছের চাষ করে বেশ লাভবান হচ্ছেন। আগে তারা সেখানে প্রতি শতকে দেড় থেকে ২ কেজি চিংড়ি উৎপাদন করতেন। এখন ক্লাসটার পদ্ধতিতে চাষ করে প্রতি শতকে ৪ থেকে ৫ কেজি চিংড়ি উৎপাদন করতে সক্ষম হচ্ছেন।
স্থানীয়রা জানান, মনির মোল্লার সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে ইতোমধ্যে অনেকেই এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ শুরু করেছেন। এর ফলে এলাকায় অর্থনৈতিক অগ্রগতি ঘটছে।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা স্নিগ্ধা খাঁ বাবলি জানান, “মনির মোল্লার মতো অনেক উদ্যোক্তা ক্লাস্টার পদ্ধতিতে মাছ চাষে এগিয়ে এলে জাতীয় মাছ উৎপাদন আরও বাড়বে এবং দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।”
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফুল ইসলাম বলেন, ” আগে দিঘলিয়া উপজেলার মৎস্য চাষিরা প্রতি শতকে দেড় থেকে ২ কেজি চিংড়ি উৎপাদন করতেন। এখন ক্লাসটার পদ্ধতিতে চাষ করে প্রতি শতকে ৪ থেকে ৫ কেজি চিংড়ি উৎপাদন করতে সক্ষম হচ্ছেন। মনির মোল্লার এই সফলতা প্রমাণ করে—পরিশ্রম, আধুনিক প্রযুক্তি ও সঠিক পরামর্শ গ্রহণ করলে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীও স্বাবলম্বী হতে পারে।”