খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মীয় অনুভূতি ও জুলাই আন্দোলনের প্রতি অবমাননাকর মন্তব্যের অভিযোগে অভিযুক্ত দুই শিক্ষার্থী মো. রাসেল ও তনয় রায় একটি ভিডিও বার্তার মাধ্যমে ক্যাম্পাসের সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়েছেন।
গত ২৯ জুলাই শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে জমা দেওয়া লিখিত অভিযোগে জানানো হয়, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিনের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মো. রাসেল দীর্ঘদিন ধরে তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ইসলাম ধর্ম, কুরআনের আয়াত, ফরজ বিধান এবং ‘জিহাদ’ সংক্রান্ত বিষয়ে অবমাননাকর ও ব্যঙ্গাত্মক মন্তব্য করে আসছিলেন। পাশাপাশি তিনি জুলাই আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের ‘লাল গেঞ্জি’ বলে কটাক্ষ করে সামাজিক মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে হুমকি দেয়ার মতো কথাও বলেন।
একই ধরনের অভিযোগ ওঠে দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তনয় রায়ের বিরুদ্ধেও। অভিযোগ অনুযায়ী, তিনি এমন একটি ফেসবুক স্টোরি শেয়ার করেন যা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানে এবং এতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
এরই প্রেক্ষিতে, ৩০ জুন বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিতে পাঠানো ভিডিও বার্তায় অভিযুক্ত দুই শিক্ষার্থী নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরে দুঃখ প্রকাশ করেন।
রাসেল তার বক্তব্যে বলেন, “সাধারণ শিক্ষার্থীরা যে ধর্ম অবমাননা এবং হুমকির অভিযোগ এনেছেন, তার বাস্তব ভিত্তি রয়েছে। আগে কোনো প্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন না হওয়ায় ভুলগুলো বারবার হয়েছে। তবে এখন আমি প্রতিজ্ঞা করছি এই ধরনের কাজ আর কখনো করব না। পূর্ববর্তী সমস্ত কর্মকাণ্ডের জন্য আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের কাছে আন্তরিকভাবে ক্ষমাপ্রার্থী।”
অন্যদিকে তনয় রায় জানান, “সম্প্রতি একটি স্টোরি শেয়ার করেছি যেটি আমি অজ্ঞতাবশত করেছি। বিষয়টি উপলব্ধি করে আমি অনুতপ্ত এবং ভবিষ্যতে এমন কোনো ভুল হবে না বলে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি।”
তাদের এই প্রকাশ্য ক্ষমা প্রার্থনার পর শিক্ষার্থীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
কেউ একে দায়িত্বশীলতার প্রতিফলন বলে মেনে নিলেও, অনেকেই প্রশাসনের কাছ থেকে কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়েছেন।
ফরেস্ট্রি অ্যান্ড উড টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মো. ফয়সাল আহম্মেদের মতে, এখন প্রশাসনের উচিত একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রকৃত তথ্য উন্মোচন করা। তিনি আরও বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় সংবিধানে এমন একটি শাস্তির ধারা থাকা জরুরি, যা সকল ধর্মের শিক্ষার্থীর অনুভূতিকে সুরক্ষিত রাখে।”
ধর্মীয় অনুভূতির গুরুত্ব তুলে ধরেন হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী জুবায়েত ইসলামও। তার ভাষায়, “ধর্ম অবমাননা কোনো ব্যক্তিগত বিষয় নয়, এটি একটি কমিউনিটির সম্মান ও বিশ্বাসে আঘাত। এজন্য কঠোর পদক্ষেপ প্রয়োজন, যাতে ভবিষ্যতে কেউ এমন কাজে সাহস না পায়।”
এ বিষয়ে ছাত্র বিষয়ক পরিচালক ড. মো: নাজমুস সাদাত বলেন, হল থেকে আমাদের কাছে অভিযোগ হস্তান্তর করা হয়েছে এবং পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে আমরা বিষয়টা তদন্ত করব এবং চেষ্টা করব নয় কার্য দিবসের ভিতর এই অভিযোগের নিষ্পত্তি ঘটনোর। ভিডিও বার্তায় ক্ষমা চাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তদন্ত শুরু হলে তখন অভিযুক্তদের ডাকা হবে তখন এসব বিষয়ে অভিযুক্তরা এভিডেন্স হিসেবে দেখাতে পারে।