বাগেরহাটের কৃষি চিত্রে চলছে এক নীরব বিপ্লব। জেলার ৯টি উপজেলার চিংড়ি ঘেরের আইলে এখন সবজি চাষে মেতেছেন হাজার হাজার কৃষক। চিংড়ির সঙ্গে সবজির যুগল চাষে বদলে যাচ্ছে অর্থনীতি, আর বছরে উৎপাদন হচ্ছে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার সবজি—জানিয়েছে বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
জেলার মোরেলগঞ্জ, ফকিরহাট, মোল্লাহাট, চিতলমারী, রামপাল, মংলা ও শরণখোলা—এই সাত উপজেলায় রয়েছে প্রায় ৮৫ হাজার চিংড়ি ঘের। একসময় এই ঘেরের বাঁধগুলো পড়ে থাকত অব্যবহৃত। এখন সেখানে ফলছে পুঁইশাক, লাউ, ঢ্যাঁড়শ, চালকুমড়া, করলা, বরবটি, শিম, বাঙ্গি, কলা, মিষ্টি কুমড়া, পেঁপে, টমেটোসহ অন্তত ২৫ প্রকারের শাক-সবজি।
চাষিরা বলছেন—চিংড়ির সঙ্গে একসাথে সবজি চাষে খরচ কম, লাভ বেশি। এনায়েত ঘরামী নামে এক চাষি জানান, “ঘেরের আইলে শাকসবজি চাষ করে আমরা চিংড়ির পাশাপাশি বাড়তি আয় করছি, খরচও একদম কম।”
এই নবীন পদ্ধতির সফলতায় পাশে দাঁড়িয়েছে কৃষি বিভাগ ও কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। দেওয়া হচ্ছে প্রযুক্তিগত সহায়তা, প্রশিক্ষণ ও ক্ষেত্রভিত্তিক সহযোগিতা। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শাহ-নেওয়াজ বলেন, “চাষিরা বছরে তিনটি সবজি মৌসুমে ঘেরের আইলে বিশের বেশি সবজি চাষ করছেন। ঘেরে চিংড়ির উৎপাদনও চলছে সমানতালে।”
এই সবজি ঘিরে বাগেরহাটে গড়ে উঠেছে নতুন নতুন বাজার। কচুয়ার গজালিয়া, সাইনবোর্ড, ষাটগম্বুজ, পোলেরহাট, বেমরতা, খাসেরহাট, চিতলমারী সদরসহ অন্তত ১৫টি বাজার থেকে প্রতিদিন প্রায় ২০ লাখ টাকার সবজি ঢাকাসহ দেশের বড় শহরগুলোতে পাঠানো হচ্ছে।
ঢাকার কারওয়ান বাজারের কাঁচামাল ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন জানালেন, “বাগেরহাটের সিঅ্যান্ডবি বাজার এখন দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় সবজির হাট। এখান থেকে প্রতিদিন শতাধিক ট্রাকে সবজি যাচ্ছে রাজধানীতে।”
বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শঙ্কর কুমার মজুমদার বললেন, “চিংড়ি চাষের ফলে জমি কমে গেছে ঠিকই, কিন্তু ঘেরের বাঁধ ব্যবহারে যে বিপুল সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, তা সঠিক পরিকল্পনায় বাস্তবায়ন করলে এই অঞ্চল থেকেই বছরে কয়েক হাজার কোটি টাকার সবজি উৎপাদন সম্ভব।”
সবজি চাষের এই সম্ভাবনা শুধু অর্থনৈতিক নয়, বরং পরিবেশবান্ধব ও টেকসই কৃষির দিকেও নতুন দিশা দেখাচ্ছে বাগেরহাটকে।
সংগীতা বিশ্বাস, সুন্দরবন-২৪