খুলনা ওয়াসার বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক এম খাদেমুল ইসলামের বিরুদ্ধে চাকরিচ্যুতির তথ্য গোপন করে পুন:চাকরী গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে। অর্থ আত্মসাতের দায়ে খুলনা পাবলিক কলেজ থেকে চাকরিচ্যুত হওয়ার বিষয়টি গোপন করে তিনি ওয়াসায় যোগদান করেন এমন প্রমাণ মিলেছে। অথচ প্রমাণিত তথ্য থাকা সত্ত্বেও এখনো তার বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি ওয়াসা কর্তৃপক্ষ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খুলনা মহানগরীর বয়রা সেন্ট্রাল রোডের বাসিন্দা মৃত আবুল হোসেন তালুকদারের ছেলে খাদেমুল ইসলাম প্রথমে খুলনা পাবলিক কলেজে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সেখানে আর্থিক অনিয়মের প্রমাণ পাওয়ায় ২০১০ সালের ২৪ জুলাই তাকে ওই কলেজ থেকে বহিষ্কার করা হয়।
পরবর্তীতে কলেজ কর্তৃপক্ষের চাপে তিনি আত্মসাৎ করা অর্থ ফেরত দেন। তবে এ চাকরিচ্যুতির বিষযটি আড়াল করে তিনি রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে খুলনা ওয়াসায় চাকরির সুযোগ পান।
অভিযোগ রয়েছে, তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের দু’জন প্রভাবশালী নেতার সুপারিশে এই নিয়োগ কার্যকর হয়।
সূত্রটি জানায়, ওয়াসায় যোগ দেওয়ার পরও খাদেমুল ইসলামের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ খাকলেও দুই নেতার আর্শিবাদ থাকায় তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
অভিযোগ রয়েছে গ্রাহকদের নিয়মিত বিল না দেওয়া, ভূতুড়ে বিল তৈরি, আর্থিক লেনদেনের বিনিময়ে মিটার গায়েব করে দেওয়া কিংবা অকেজো দেখানো- এমন নানা কর্মকান্ডের সঙ্গে তার নাম জড়িয়েছে। এসব কাজে তাকে সহায়তা করছেন তার শৈশবের বন্ধু ঠিকাদার এরশাদ আলী এবং ওয়াসার এক সহকারী প্রোগ্রামার।
এদিকে, খুলনার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মো. মুনসুর আহমেদ
ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ করলে বিষয়টি জানাজানি হয় এবং ব্যবপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।
সূত্র জানায়, ওই অভিযোগের প্রেক্ষিতে ওয়াসার সচিব প্রশান্ত কুমার বিশ্বাস গত বছর (২০২৪) ২২ অক্টোবর খুলনা পাবলিক কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে খাদেমুল ইসলামের অতীত সম্পর্কে মতামত চান। ফলে ৩১ অক্টোবর কলেজ অধ্যক্ষ লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ শামীমুল আহসান শামীম লিখিতভাবে নিশ্চিত করেন যে, খাদেমুল ইসলাম আর্থিক অনিয়মের দায়ে চাকরিচ্যুত হয়েছিলেন। তবে প্রমাণিত অভিযোগ সত্ত্বেও কেন এখনো খাদেমুল ইসলামের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি- এ প্রশ্ন উঠেছে সাধারণ মানুষের মধ্যে।
এ বিষয়ে ওয়াসা কর্তৃপক্ষের তরফে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে জানতে চাইলে খুলনা ওয়াসার ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু সায়েদ মোঃ মনজুর আলম
বলেছেন, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলেই পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তদন্ত শেষ হতে কেন এই দীর্ঘসূত্রিতা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওইসময় তিনি দায়িত্বে ছিলেন না। সম্প্রতি তিনি দায়িত্বে এসেছেন।
খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মোঃ বাবুল হাওলাদার বলেন, দুর্নীতির দায়ে বহিষ্কৃত একজন ব্যক্তি কীভাবে প্রভাব খাটিয়ে আবারও সরকারি প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ পান সেটি খতিয়ে দেখা উচিত।
তিনি বলেন, ওয়াসার মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে এমন অনিয়ম চলতে থাকলে সাধারণ গ্রাহকই
সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
এ ব্যাপারে খুলনা ওয়াসার বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক খাদেমুল ইসলামের বক্তব্য জানার জন্য তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিকবার রিং করা হলেও সেটি রিসিভ হয়নি।