সৈকত মোঃ সোহাগ, খুলনা অফিস:
খুলনায় ক্লিনিক থেকে নবজাতক চুরির ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া শাহাজাদী ও তাঁর মা নার্গিস বেগমের জামিন নঞ্জুর করেছেন আদালত। আজ মঙ্গলবার খুলনা মহানগর দায়রা জজ আদালতে তাঁদের জামিন আবেদন করা হলে। আদালতের বিচারক মোঃ শরীফ হোসেন হায়দার মঞ্জুর করেন।
আজ দুপুরে তাদেরকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
আইনজীবী শেখ রফিকুজ্জামান বলেন, আজ সকালে আদালতের আদেশের অনুলিপি তুলে খুলনা মহানগর দায়রা জজ আদালতে জামিনের আবেদন করা হলে আদালত বিশেষ বিবেচনা এবং বিনা জামানতে তাদেরকে জামিন দেন।
খুলনা কারা কর্তৃপক্ষের জেলার মোহাম্মাদ মুনীর হোসাইন জানান, জামিনের কপি আসার পর বেলা পৌণে দুইটায় শাহাজাদীর মা নার্গিস বেগমকে কারাগার থেকে মুক্ত করে দেওয়া হয়। এছাড়া বেলা পৌণে তিনটায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেন প্রিজন সেলে চিকিৎসাধীন শাহাজাদীকে মুক্ত করে দেওয়া হয়।
এর আগে রোববার ক্লিনিকে পুলিশের হেফাজতে চিকিৎসাধীন শাহাজাদীকে ছাড়পত্র দেওয়া হলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শাহীন কবির তাঁকে আদালতে হাজির করেন। কিন্তু শাহাজাদীর পক্ষে কোনো আইনজীবী না থাকায় জামিনের শুনানি হয়নি। আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। ওইদিন কারাগারে নবজাতক সন্তানকে নিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন শাহাজাদী। রাতেই চিকিৎসকদের পরামর্শে খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের প্রিজন সেলে পাঠায় কারা কর্তৃপক্ষ। সেখানে পৃথক কেবিনে রেখে তাঁদের চিকিৎসা দেওয়া হয়। গতকাল সোমবার শাহজাদীর পক্ষে জামিন ধরা হলে জামিন দেয়নি নিম্ন আদালত। আজ মঙ্গলবার জামিন পেয়ে সাংবাদিকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন শাহজাদী। তবে তার শশুড় বাড়ী থেকে কোন খোঁজ না নেওয়ায় তিনি হতাশা প্রকাশ করেছেন।
হাসপাতাল, পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১১ সেপ্টেম্বর নগরীর রূপসার একটি ক্লিনিকে সিরাজুল ইসলাম ও শাহাজাদী দম্পতির কোলজুড়ে আসে ফুটফুটে কন্যাশিশু। এর আগে পরপর আরও চার কন্যার জন্ম দেন শাহাজাদী। এবার অন্তত ছেলে হবে, এমন প্রত্যাশা ছিল স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের। ছেলে না হওয়ায় স্ত্রীকে হাসপাতালে রেখে চলে যান সিরাজুল। আর খবর নেননি। পরিবারের চাপ ও হতাশার মধ্যে ১৫ সেপ্টেম্বর ঘটে দুর্ঘটনা। ওই দিন একই হাসপাতাল থেকে আরেক প্রসূতির চার দিন বয়সী ছেলে নবজাতক চুরি হয়। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ ও পুলিশের তৎপরতায় উদ্ধারও করা হয়। শাহাজাদীর মা নার্গিস বেগমের (৫৫) কাছ থেকে চুরি হওয়া নবজাতককে উদ্ধার করা হয়। তখন তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। তখন তিনি পুলিশের কাছে দাবি করেন, মেয়ের সংসার টিকিয়ে রাখতে শিশুটিকে তিনি চুরি করেছিলেন।
অপর দিকে চুরি যাওয়া শিশুর বাবা মো. মির্জা সুজন ওই দিনই মানব পাচার আইনে একটি মামলা করেন। সেই মামলায় শাহাজাদীর মা ও তাঁকে আসামি করা হয়।
