বুধবার, ০১ অক্টোবর ২০২৫, ১০:১৪ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ
খুলনায় মৃত ৬জন সরকারি কর্মচারীর পরিবারকে ৪০ লাখ টাকার চেক হস্তান্তর মোল্লাহাটে মহাসড়কে যুবককে গুলি শরণখোলায় বিপুল উৎসাহ ও আনন্দমূখর পরিবেশে পালিত হচ্ছে শারদীয় দুর্গা উৎসব এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ও চিকিৎসাভাতা নিয়ে সুখবর ২২ মাসের বকেয়া বেতন ভাতা প্রদানের দাবিতে খুলনায় কর্মকর্তা কর্মচারীদের মানববন্ধন  গণভোট’ই সমস্যার সমাধান হতে পারে:-শেখ মোস্তাফিজুর রহমান খুলনায় ঘুমন্ত অবস্থায় যুবককে গুলি করে হত্যা পূর্ব সুন্দরবনের করমজলে কুমিরের আক্রমণে নিহত জেলের লাশ উদ্ধার মহেশপুর সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রয়াত শিক্ষকদের স্মরণ  সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত চরফ্যাশনে কৃতি শিক্ষার্থী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে নাজিম উদ্দিন আলম

গল্লামারী মৎস্য বীজ উৎপাদন খামার খুবির জন্য অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া আরো এক ধাপ এগোলো

খুলনা অফিস / ৫৬ বার পড়া হয়েছে
সময়ঃ মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ৭:৩২ অপরাহ্ন

# অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বাধীন কমিটির পরিদর্শন
# দাবিতে বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির মানববন্ধন স্মারকলিপি
সৈকত মোঃ সোহাগ, খুলনা অফিস:
গল্লামারী মৎস্য খামারকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় আনা নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা নিরসন হওয়ার পথে। এ খামরটি বর্তমানে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের দখলে থাকায় সৃষ্ট সংকট নিরসনে মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বাধীন কমিটি আজ মঙ্গলবার সকালে মৎস্য খামার ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা পরিদর্শন করেন। কমিটি বিষয়টি পর্যালোচনা করে ঢাকায় ফিরে সুপারিশসহ প্রতিবেদন দাখিল করবেন।
এদিকে খুলনা মহানগরীর গল্লামারী মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারটি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অধিগ্রহণ, শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট নিরসন, উচ্চশিক্ষার পথ সুগম করা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঙ্খিত উন্নয়নের দাবিতে বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি করেছে।
আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এ মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তারা বলেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় খুলনাবাসীর দীর্ঘদিনের আন্দোলনের ফসল। কিন্তু দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষা ও গবেষণা ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকলেও অবকাঠামোসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে এখনো পিছিয়ে রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকরা আবাসন সংকটসহ নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত। আমরা এইসকল সমস্যার দ্রুত সমাধান চাই।
বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সিনিয়র সহসভাপতি নিজাম উর রহমান লালুর সভাপতিত্বে এবং মহাসচিব অ্যাডভোকেট শেখ হাফিজুর রহমান হাফিজের পরিচালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট এস এম শফিকুল আলম মনা।
মানববন্ধন কর্মসূচি শেষে বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির নেতৃবৃন্দ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কার্যালয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ও গল্লামারী মৎস্য বীজ উৎপাদন খামার পরিদর্শনকারী কর্মকর্তা মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের পর্যালোচনা ও সুপারিশ প্রদান কমিটির প্রধান অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) মো. ইমাম উদ্দীন কবিরের নিকট স্মারকলিপি প্রদান করেন।
এ সময় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. রেজাউল করিম, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মীর্জা মোহাম্মদ আলী রেজা, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. হাসানুজ্জামান, উপ সচিব শাহাদাত খন্দকার, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. হারুন অর রশীদ খান, ট্রেজারার প্রফেসর ড. নূরুন্নবী, ছাত্রবিষয়ক পরিচালক প্রফেসর ড. নাজমুস সাদাত, এফ এম আর টি ডিসিপ্লিনের প্রধান প্রফেসর ড. মো. মোস্তাফিজুর রহমানসহ বিভিন্ন স্কুলের ডিন, ডিসিপ্লিন প্রধান, প্রভোস্ট ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের পর্যালোচনা ও সুপারিশ প্রদান কমিটির প্রধান অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) মো. ইমাম উদ্দীন কবিরের নেতৃত্বে একটি টিম ওই এলাকা পরিদর্শন করেন। এসময়ে তিনি দ্রুত একটি সমাধান হবে বলে জানান।
সূত্র জানায়, গল্লামারী মৎস্য খামারকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় আনার দাবিতে ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে শিক্ষার্থীরা মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সচিবের কাছে স্মারকলিপি দেয়। এছাড়া দাবি আদায়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভসহ নানা কর্মসূচি পালন করে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মৎস্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে জমি হস্তান্তরের অনুরোধ জানিয়ে পত্র দেয়।
এক পর্যায়ে চলতি বছরের মার্চে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার খুলনা সফরকালে ক্যাম্পাসে আসলে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে দাবির যৌক্তিকতা তুলে ধরা হয়। তিনি দাবিকে যৌক্তিক হিসেবে উল্লেখ করেন এবং এটি ‘শহীদ মীর মুগ্ধর দাবি’ হিসেবে গণ্য করে সমাধানের আশ্বাস দিলেও বিষয়টি ঝুলে থাকে।
দীর্ঘ চার মাসেও যৌক্তিক এই দাবি বাস্তবায়নে তেমন কোন অগ্রগতি না হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে তারা গত ১০ আগস্ট গল্লামারী মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারের প্রশাসনিক ভবনকে ‘শহীদ মীর মুগ্ধ হল’ ঘোষণা করে ব্যানার ঝুলিয়ে দেয়। এরপর থেকে সেখানে অফিসিয়াল কাজকর্ম বন্ধ রয়েছে।
এর আগে শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে গত ২০ আগস্ট মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের সভাপতিত্বে এক পর্যালোচনা সভায় কমিটি গঠন করা হয়। অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বাধীন কমিটির সুপারিশে গল্লামারী মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় আনার বিষয়ে শিক্ষার্থী ও খুলনাবাসীর দাবি পূরণ হবে বলে সকলে আশাবাদি।
এ ব্যাপারে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ রেজাউল করিম জানান, গল্লামারী মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারটি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানার অভ্যন্তরে একটি বিচ্ছিন্ন ভূখণ্ড হিসেবে অবস্থিত। তিনদিকে বিশ্ববিদ্যালয় দ্বারা পরিবেষ্টিত এই জমি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক সৌন্দর্য, নিরাপত্তা এবং পরিকল্পিত অবকাঠামো উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।
তিনি বলেন, গল্লামারী মৎস্য খামারটির নিরাপত্তা ব্যবস্থা দুর্বল হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট নিরসন ও ফিল্ড ল্যাব হিসেবে ব্যবহারের সুবিধার্থে গল্লামারী মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুকূলে হস্তান্তরের প্রয়োজনীয়তা আমরা মন্ত্রণালয়ের মিটিংয়ে যথাযথভাবে তুলে ধরেছি। মৎস্য অধিদপ্তর তাদের প্রয়োজনীয়তা পার্শ¦বর্তী ডুমুরিয়া উপজেলা মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারের মাধ্যমে অনায়াসে মেটাতে পারে, জানান এই শিক্ষাবিদ।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে অনেকটা অযত্ন ও অবহেলায় খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে এখানকার মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারের কার্যক্রম। দক্ষ জনবল, পুকুর সংস্কার, ড্রেনেজ ব্যবস্থা এবং প্রয়োজনীয় কারিগরি উপকরণের অভাবে আশানুরূপ পোনা উৎপাদনে ব্যাহত হচ্ছে খামারটিতে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাত্র ১৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ডুমুরিয়া মৎস্যবীজ উৎপাদন খামারই হতে পারে এর উত্তম বিকল্প। খুলনা সাতক্ষীরা মহাসড়কের কোষঘেষে প্রায় ২২ বিঘা জমির ওপর ১৯৮৫ সালে খামারটি প্রতিষ্ঠিত হয়। দীর্ঘদিন ধরেই সেটি অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে। সামান্য কিছু সংস্কার করলেই ডুমুরিয়ার এই খামারেই পোনা উৎপাদনসহ সব ধরনের গবেষণা কার্যক্রম চালানো সম্ভব। খুলনার শীর্ষ মৎস্য উৎপাদন উপজেলা ডুমুরিয়াতে খামারটি স্থাপন হলে মৎস্য চাষীরা যেমন উপকৃত হবে, তেমনটি সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটসহ আশপাশের উপজেলায় পোনা পরিবহনও সহজতর হবে।
সূত্র জানায়, ডুমুরিয়া উপজেলা পরিষদের সামনে খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের কোল ঘেঁষে ১৯৮৫ সালে সাড়ে ২২ বিঘা সম্পত্তির উপর সরকারিভাবে গড়ে তোলা হয় খামারটি। এখানে মাছের পোনার চাহিদা মিটিয়ে অন্য উপজেলায় সরবরাহের লক্ষ্যে খামারটি স্থাপন করা হয়। খামারে রয়েছে ছোট বড় ৫টি পুকুর। রয়েছে দ্বিতলা বিশিষ্ট ১টি অফিস ভবন, ১টি হ্যাচারি ঘর ও ১টি জাল শুকানো ঘর। রেণু থেকে ধানি পোনা করতে পুকুরে পানির পরিমাণ লাগে প্রায় আড়াই ফুট। কিন্তু পুকুর সংস্কার না করায় বিশেষ করে শুকনো মৌসুমে পানির স্বল্পতা দেখা দেয়। এতে উৎপাদন অনেকটা ব্যাহত হয়। অযত্ন অবহেলায় খামারে ভুতুড়ে পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। এ যেন ঘাস-খড়ের অভয়ারণ্য! এদিকে পানি নিষ্কাশনের পথ না থাকায় অতিবৃষ্টি হলেই প্লাবিত হয় পুকুরগুলো। পুকুরগুলো সংস্কার বা খনন হয়নি দীর্ঘদিন।
এ বিষয়ে সিনিয়র উপজেলা মৎস্য অফিসার সোহেল মোঃ জিল্লুর রহমান রিগান জানান, এ খামারের উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করা গেলে শুধু ডুমুরিয়া নয়, খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটের মৎস্য চাষীরা উপকৃত হবেন। এছাড়া দক্ষ জনবল, পুকুর সংস্কার, ড্রেনেজ ব্যবস্থা এবং প্রয়োজনীয় কারিগরি উপকরণের যোগান দিতে পারলে পোনা উৎপাদনে ডুমুরিয়া মৎস্য খামারটি গল্লামারীর চেয়েও অধিক কার্যকরী হতে পারে বলে অভিমত নাগরিক নেতৃবৃন্দের।
এদিকে গল্লামারী মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় আনতে শিক্ষার্থীদের দাবির সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেছে খুলনার বিভিন্ন নাগরিক সংগঠন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটেগরির আরো খবর
Theme Created By AR.Host