বৃহস্পতিবার, ০২ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:০২ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
খুলনায় মৃত ৬জন সরকারি কর্মচারীর পরিবারকে ৪০ লাখ টাকার চেক হস্তান্তর মোল্লাহাটে মহাসড়কে যুবককে গুলি শরণখোলায় বিপুল উৎসাহ ও আনন্দমূখর পরিবেশে পালিত হচ্ছে শারদীয় দুর্গা উৎসব এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ও চিকিৎসাভাতা নিয়ে সুখবর ২২ মাসের বকেয়া বেতন ভাতা প্রদানের দাবিতে খুলনায় কর্মকর্তা কর্মচারীদের মানববন্ধন  গণভোট’ই সমস্যার সমাধান হতে পারে:-শেখ মোস্তাফিজুর রহমান খুলনায় ঘুমন্ত অবস্থায় যুবককে গুলি করে হত্যা পূর্ব সুন্দরবনের করমজলে কুমিরের আক্রমণে নিহত জেলের লাশ উদ্ধার মহেশপুর সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রয়াত শিক্ষকদের স্মরণ  সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত চরফ্যাশনে কৃতি শিক্ষার্থী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে নাজিম উদ্দিন আলম

প্রকল্পের সময় বেড়েছে আটবার, ব্যয় বেড়ে দ্বিগুণ

খুলনার নতুন কারাগার : বন্দিরা খুশি, কাজের দীর্ঘসূত্রিতায় কর্তৃপক্ষ বেজার

খুলনা অফিস / ৭৯ বার পড়া হয়েছে
সময়ঃ শনিবার, ৩০ আগস্ট, ২০২৫, ১২:৩৪ অপরাহ্ন

সৈকত মোঃ সোহাগ, খুলনা অফিস;

শত বছরের পুরানো খুলনা জেলা কারাগারে বন্দি রয়েছে ধারণ ক্ষমতা দ্বিগুণের বেশি। ভাঙাচোরা, জরাজীর্ণ ভবনে আতংকে দিন কাটে বন্দিদের। নির্মাণাধীন ঝকঝকে নতুন কারাগার দেখে, গল্প শুনে খুশি বন্দিরা। কারণ বিশাল এলাকা জুড়ে নতুন কারাগার তৈরি হয়েছে সংশোধনাগার হিসেবে। সেখানে পরিবেশ ভালো, সুযোগ-সুবিধাও বেশি। এনিয়ে রাজনৈতিক বন্দিদের মধ্যেও রয়েছে স্বস্তির নিঃশ্বাস।

তবে ধীরগতির কাজ ও মান নিয়ে অসন্তুষ্ট কারা কর্তৃপক্ষ। গত মে মাসে কারাগার হস্তান্তর করার কথা থাকলেও তা সম্ভব হয়নি। বেশকিছু কাজ এখনও বাকি রয়েছে। যার কারণে প্রস্তুতি নিয়ে কারাগারটি চালু করতে দেরি হচ্ছে।

 

 

 

 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, খুলনার নতুন কারাগারের নির্মাণ কাজ কিছুটা বাকি রয়েছে। গত ২৫ মে গণপূর্ত বিভাগের কাছ থেকে নতুন কারাগারটির বুঝে নেওয়ার কথা ছিল কারা কর্তৃপক্ষের। কিছু কাজ অসম্পূর্ণ থাকায় ওইদিন হস্তান্তর হয়নি। ফলে গত মাসে জুলাই মাসে কারাগারটি বুঝিয়ে দেওয়ার কথা থাকলেও অসম্পূর্ণতার কারণে তা বুঝিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়নি।

গত বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) খুলনা জেলা কারাগারের সুপার মো: নাসির উদ্দিন প্রধান এবং জেলার মো. মুনীর হুসাইনসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা নবনির্মিত কারাগারটি পরিদর্শনে যান। এ সময় তারা কাজের ধীর গতি দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং দ্রুত কাজ শেষ করার তাগিদ দেন।

 

 

সূত্র জানায়, ১৯১২ সালে নগরীর ভৈরব নদীর তীরে নির্মাণ করা হয় খুলনার প্রথম কারাগার। সেখানে বন্দি ধারণ ক্ষমতা ৬৭৮ জনের। বর্তমানে সেখানে ১ হাজার ৩৭৮ জন বন্দি রয়েছেন। ১১৩ বছরের পুরাতন জরাজীর্ণ ভবনে ঝুঁকি নিয়ে থাকতে হয় বন্দিদের। এসব বিবেচনায় নিয়েই নতুন কারাগার নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়।

খুলনার সিটি (রূপসা সেতু) বাইপাস সড়কের খালাশীর মোড়ের অদূরে প্রায় ৩০ একর জমির ওপর নতুন কারাগার নির্মিত। মাস্টারপ্লান অনুযায়ী নতুন কারাগারে ৪ হাজার বন্দি থাকতে পারবেন। প্রকল্পের আওতায় আপাতত ২ হাজার বন্দি রাখার অবকাঠামো তৈরি হয়েছে। পরে প্রয়োজন পড়লে পৃথক প্রকল্প নিয়ে অন্য অবকাঠামো নির্মাণ হবে।

 

 

গণপূর্ত বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রাশিদুল ইসলাম জানান, বন্দিদের জন্য পৃথক ভবন, ফাঁসির মঞ্চ, নারীদের ডে কেয়ার সেন্টার, কিশোর, শ্রেণিপ্রাপ্ত পৃথক ভবন, ওয়ার্ক সেড ও বিনোদন কেন্দ্র, ৪টি রান্না ঘর, পুরুষদের মোটিভেশন সেন্টার, জেল লাইব্র্রেরি, স্কুল ও হাসপাতাল রয়েছে। এছাড়া পুরুষ ও নারী কারারক্ষীদের জন্য একাধিক কোয়াটার, প্রশাসনিক ভবন, সেলুন, লন্ড্রিসহ ৫২টি স্থাপনা তৈরী করা হয়েছে। কারাগারের ভেতরে পুরুষ, নারী ও সাজাপ্রাপ্ত বন্দিদের পৃথক ব্যারাক রয়েছে।

 

 

গত বৃহস্পতিবার নতুন কারাগারের ভেতরে ঘুরে দেখা গেছে, বন্দিদের প্রতিটি ব্যারাকের চারপাশে পৃথক সীমানা প্রাচীর রয়েছে। এক শ্রেণির বন্দিদের অন্য শ্রেণির বন্দিদের সঙ্গে মেশার সুযোগ নেই। কারাগারের ভেতরে শুধু সীমানা প্রাচীরই রয়েছে প্রায় ৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের। ভেতরে ড্রেন, ফুটপাত, নিজস্ব পয়ঃ বর্জ্য শোধন কেন্দ্র, ওয়াকওয়ে, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ব্যবস্থা, দুটি পুকুর ও সৌর বিদ্যুতের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তবে মাটি ভরাট কাজ হয়নি। কিছু ভবনের কাজ অসম্পুর্ণ রয়েছে।

 

 

প্রকল্প অফিস থেকে জানা যায়, নতুন এ কারাগার নির্মাণ হচ্ছে সংশোধনাগার হিসেবে। এখানে বিচারাধীন ও সাজাপ্রাপ্ত বন্দিদের পৃথক স্থানে রাখা হবে। কিশোর ও কিশোরী বন্দিদের জন্য রয়েছে পৃথক ব্যারাক। নারীদের জন্য পৃথক হাসপাতাল, মোটিভেশন সেন্টার ও ওয়ার্কশেড আছে। একইভাবে বন্দিদের জন্য ৫০ শয্যার হাসপাতাল থাকবে।

আরও থাকবে কারারক্ষীদের সন্তানদের জন্য স্কুল, বিশাল লাইব্রেরি, ডাইনিং রুম, আধুনিক সেলুন ও লন্ড্রি। কারাগারে শিশুসন্তানসহ নারী বন্দিদের জন্য থাকবে পৃথক ওয়ার্ড ও ডে-কেয়ার সেন্টার। ওয়ার্ডটিতে সাধারণ নারী বন্দি থাকতে পারবেন না। সেখানে শিশুদের জন্য লেখাপড়া, খেলাধুলা, বিনোদন ও সংস্কৃতিচর্চার ব্যবস্থা থাকবে। কারাগারে পুরুষ ও নারী বন্দিদের হস্তশিল্পের কাজের জন্য আলাদা আলাদা ওয়ার্কশেড, বিনোদন কেন্দ্র ও নামাজের ঘর থাকবে।

 

 

কারাগারের জেলার মো. মুনীর হুসাইন বলেন, সম্প্রতি নতুন কারাগার পরিদর্শনে গিয়ে দেখতে পাই মাটি ভরাট কাজ এখনও শেষ হয়নি। এটি দ্রুত করা না হলে বসবাস করা সম্ভব নয়। অনেক কাজ বাকী আছে। কিছু ভবনের কাজ এখনও শেষ হয়নি। পূর্ণাঙ্গ কাজ শেষ না হলে আমরা হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় যাব না।

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গত জুলাই মাসে কারাগারটি হস্তান্তর করার কথা ছিল। কিন্তু কাজের যে গতি তাতে করে আরো কয়েক মাস লাগবে।

এদিকে কাজের অগ্রগতি দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন খুলনার জেল সুপার মো. নাসির উদ্দিন প্রধান। তিনি দ্রুত কাজ সমাপ্ত করার জন্য গণপূর্তকে অনুরোধ জানান।

উল্লেখ্য, ২০০৮ সালে নতুন করে একটি কারাগার নির্মাণে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ২০১১ সালে প্রকল্পটি একনকের সভায় অনুমোদন হয়। এরপর স্থান নির্ধারণ, জমি অধিগ্রহণসহ সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। ২০১১ সালের অনুমোদিত খুলনা জেলা কারাগার নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় ছিল ১৪৪ কোটি টাকা। ২০১৭ সালের ৬ জুন প্রকল্পটি প্রথম দফা সংশোধন করা হয়। এতে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ২৫১ কোটি টাকা। নতুন লক্ষ্য নেওয়া হয় ২০১৯ সালের ৩০ জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার। এর পর পাঁচ দফায় পাঁচ বছর সময় বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু কাজ আর শেষ হয়নি। ২০২৩ সালের মে মাসে দ্বিতীয় দফায় প্রকল্প সংশোধন করা হয়েছে। এতে ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮৮ কোটি টাকায়। এরপর আটবার প্রকল্পের সময় বেড়েছে, দুই দফা সংশোধনের পর ব্যয় বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ। ৯ বছরেও প্রকল্পটি পুরোপুরি বাস্তবায়ন ও হস্তান্তর করা সম্ভব হয়নি।

 

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটেগরির আরো খবর
Theme Created By AR.Host