বুধবার, ০১ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:১২ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ
খুলনায় মৃত ৬জন সরকারি কর্মচারীর পরিবারকে ৪০ লাখ টাকার চেক হস্তান্তর মোল্লাহাটে মহাসড়কে যুবককে গুলি শরণখোলায় বিপুল উৎসাহ ও আনন্দমূখর পরিবেশে পালিত হচ্ছে শারদীয় দুর্গা উৎসব এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ও চিকিৎসাভাতা নিয়ে সুখবর ২২ মাসের বকেয়া বেতন ভাতা প্রদানের দাবিতে খুলনায় কর্মকর্তা কর্মচারীদের মানববন্ধন  গণভোট’ই সমস্যার সমাধান হতে পারে:-শেখ মোস্তাফিজুর রহমান খুলনায় ঘুমন্ত অবস্থায় যুবককে গুলি করে হত্যা পূর্ব সুন্দরবনের করমজলে কুমিরের আক্রমণে নিহত জেলের লাশ উদ্ধার মহেশপুর সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রয়াত শিক্ষকদের স্মরণ  সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত চরফ্যাশনে কৃতি শিক্ষার্থী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে নাজিম উদ্দিন আলম

উপমহাদেশে প্রচলিত শিরকি কাজ

শরণখোলা দর্পণ ডেস্কঃ / ৫৬ বার পড়া হয়েছে
সময়ঃ মঙ্গলবার, ২৪ জুন, ২০২৫, ৫:১৮ অপরাহ্ন

হিমালয়ান উপমহাদেশে প্রচলিত বিভিন্ন শিরকি কর্মকাণ্ড সম্পর্কে নিম্নে বর্ণনা করা হলো—

দোয়ায় শিরক : নবী, পীর, আওলিয়া বা মাজারের কাছে ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি, প্রমোশন, রোগমুক্তি, সন্তান লাভ, নির্বাচনে জেতা ইত্যাদির জন্য (এসব তাঁদের হাতে আছে, এই বিশ্বাস রেখে) প্রার্থনা করা শিরক।

মহব্বতের শিরক : কোনো পীর, দরবেশ বা অলিকে আল্লাহর মতো ভালোবাসা শিরক।

আনুগত্যের শিরক : কোরআন-হাদিসের পরিপন্থী কাজে পীর, ইমাম বা আলেমদের আনুগত্য করা শিরক।

সম্পর্কের শিরক : আল্লাহ তাআলা তাঁর সৃষ্টির মধ্যে বিলীন হয়ে আছেন এবং স্রষ্টা ও সৃষ্টির মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই—এরূপ ধারণা করা শিরক।

ব্যবস্থাপনার শিরক : আওলিয়া, কুতুবরা সৃষ্টিজগতের ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত আছেন—এরূপ বিশ্বাস করা শিরক।

ক্ষমতার শিরক : বিপদে পড়লে স্বীয় পীরকে স্মরণ করা শিরক।

গুণের (সিফাত) শিরক : আল্লাহর কোনো সৃষ্টিকে ওই সব গুণের অধিকারী মনে করা শিরক, যা শুধু আল্লাহর অধিকার।

আমলের শিরক : আল্লাহ ছাড়া অন্যের জন্য কোরবানি করা, মানত করা, নজর-নিয়াজ দেওয়া ইত্যাদি শিরক।

তাওয়াফের শিরক : কাবাঘর ছাড়া অন্য কোথাও তাওয়াফ করা শিরক (অর্থাৎ পীর-আওলিয়াদের মাজার তাওয়াফ করা শিরক)।

হিফাজতের শিরক : বিদায়ের আগে কারো নিরাপত্তা কামনায় পীর-আওলিয়াদের নাম করে তাঁদের হেফাজতে দেওয়া (দোহাই দেওয়া) শিরক।

মর্যাদার শিরক : আল্লাহ ও মহানবী (সা.)-কে একই মর্যাদার অধিকারী মনে করা।

ইবাদতের শিরক : আল্লাহ ছাড়া অন্যকে দেখানোর জন্য ইবাদত করা শিরক।

নির্ভরতার শিরক : আকিক বা এ ধরনের পাথর ব্যবহার করলে ভাগ্য পরিবর্তন হবে—এমন আকিদা থাকা শিরক।

বিবিধ শিরক : আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুর কসম খাওয়া, অন্যের জিকির করা, অন্যের কাছে তাওবা করা, কাউকে ক্ষতি ও উপকারের মালিক করা এবং কাউকে আল্লাহর সমতুল্য বলে মনে করা শিরক।

প্রখ্যাত আলেমে দ্বিন প্রফেসর ড. আ ন ম রফিকুর রহমান তাঁর বিখ্যাত ‘আশ শিরক’ গ্রন্থে বাংলাদেশে প্রচলিত কিছু শিরকের একটি তালিকা প্রদান করেছেন, যা নিম্নরূপ—

ওলিদের কবরের ওপর অথবা পার্শ্ববর্তী স্থানের গাছের শিকড়, বাকল ব্যবহারে বিবিধ কল্যাণ লাভ হবে বলে বিশ্বাস করা। ওলি, বুজুর্গদের কবরের পার্শ্ববর্তী স্থানের গাছে মানত করে সুতা, তাগা ইত্যাদি বাঁধলে মানত পুরা হবে বলে বিশ্বাস করা। বিভিন্ন মাজার থেকে আনা সুতা, তাগা হাতে বাঁধলে বা গলায় ঝুলালে বিপদ-আপদ দূর হবে, রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে বলে বিশ্বাস করা এবং কবরে সিজদা করা।

মাজারের পুকুরের পানি পান করলে, পুকুরের কুমির, কাছিম, গজার মাছকে খাবার দিলে রোগ থেকে মুক্তি লাভ করবে, বিপদ-আপদ দূর হবে বলে বিশ্বাস করা। ছোট ছেলেমেয়েদের বিপদ-আপদ, জিন-ভূত, রোগব্যাধি থেকে মুক্তির জন্য তাদের গায়ে কাছিম, গজার মাছ ইত্যাদির শেওলা মাখা, মাজারের ধুলাবালি মাখা ইত্যাদি। মৃত ওলিরা সাহায্য করতে পারেন—এ বিশ্বাসের ভিত্তিতে তাঁদের কবরের কাছে সাহায্য চাওয়া। গাড়ি চালানোর সময় বিপদ-আপদ ও দুর্ঘটনা থেকে বাঁচার উদ্দেশে (মৃত ব্যক্তিকে ত্রাতা মনে করে) মাজারে টাকা-পয়সা দেওয়া।

নবী-রাসুলরা বা ওলিরা গায়েব (সব ধরনের গায়েবি বিষয়) জানেন বলে বিশ্বাস করা। জীবনকে সুখকর করার জন্য ওলিদের কবর, কবরের দেয়াল, গিলাফ ইত্যাদি স্পর্শ করে, চুমু খেয়ে বরকত নেওয়া। ওলিরা (জীবিত বা মৃত অবস্থায়) সর্বত্র হাজির হতে পারেন—এমন বিশ্বাস করা। ওলিদের কবর, বুজুর্গ ব্যক্তি ও পীরের সামনে মাথা নত করে দাঁড়িয়ে থাকা। দোয়া গৃহীত হওয়ার জন্য বুজুর্গদের মাজারের দিকে মুখ করে দোয়া করা।

ক্ষমতার দিক থেকে মাজারস্থিত ব্যক্তিকে আল্লাহর সমকক্ষ মনে করা। ওলিদের মাজারে অবস্থান গ্রহণ করে তাঁদের বাতেনি ফায়েজ লাভের আশা করা। ওলিরা বিভিন্ন আকৃতি ধারণ করতে পারেন বলে বিশ্বাস করা।

রাসুলুল্লাহ (সা.) (সব ধরনের) গায়েব জানেন বলে বিশ্বাস করা (তবে হ্যাঁ, মহান আল্লাহ ওহির মাধ্যমে তাঁর প্রিয় হাবিবকে অনেক গায়েবি বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান দান করেছেন। তাই বিষয়টি নিয়ে উপমহাদেশে ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যা প্রচলিত আছে)।

রাসুলুল্লাহ (সা.) মিলাদ মাহফিলে হাজির হন—এ ধারণা পোষণ করা। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কথিত কদম মুবারকের ছাপবিশিষ্ট পাথর দ্বারা রোগমুক্তি ও কল্যাণ কামনা করা।

আবু জাহলের হাতের পাথর দিয়ে রোগমুক্তি ও কল্যাণ কামনা করা। টিয়া পাখি, বানরের মাধ্যমে ভাগ্য জানার চেষ্টা করা। ভাগ্য সম্পর্কীয় ব্যাপারে গণক ও জ্যোতিষদের কথায় বিশ্বাস করা। গাউস, কুতুব, আবদাল দুনিয়া পরিচালনা করেন, মানুষের ভালোমন্দ করেন বলে বিশ্বাস করা।

‘আহমাদ’ আর ‘আহাদ’ এর মধ্যে কেবল ‘মীম’ অক্ষরের পার্থক্য বলে বিশ্বাস করা। আরশে যিনি আল্লাহ ছিলেন, মদিনায় তিনিই রাসুল হয়ে আগমন করেছেন বলে বিশ্বাস করা। আল্লাহর ধন খাজাকে দিয়ে আল্লাহ হলেন শূন্য হাত। এখন যা কিছু প্রয়োজন খাজার নিকট চাইতে হবে, এ বিশ্বাস পোষণ করা।

কোনো ছবি বা মূর্তিকে সামনে রেখে মাথা নত করা, কুর্নিশ করা। আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে আইনদাতা, বিধানদাতা বলে বিশ্বাস করা। কোনো ব্যক্তিকে দোজাহানের কিবলা বলে বিশ্বাস করা। কোনো বুজুর্গ ব্যক্তি একই সময়ে একাধিক জায়গায় অবস্থান করতে পারেন বলে বিশ্বাস করা। কবর জিয়ারতের পর কবরের সম্মানে পিছপা হয়ে আসা (কবরকে পিছ দিয়ে আসা বেয়াদবি মনে করা)।

আকিক, পান্না প্রভৃতি পাথর ও রত্ন মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলতে পারে, মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে পারে, এরূপ বিশ্বাস পোষণ করা। (প্রফেসর ড. আ ন ম রফিকুর রহমান, আশ শিরক, পৃ. ১৪০-১৪২)

[সূত্র : ড. মুহাম্মাদ নূরুল ইসলাম, ইসলামের ধর্মীয় নীতি ও প্রতিষ্ঠানসমূহ এবং সাহিত্য ও বিজ্ঞানের ক্রমোন্নতি, এম আবদুল্লাহ অ্যান্ড সন্স, বাংলাবাজার, ঢাকা, জানুয়ারি ২০১৯, পৃষ্ঠা-৩৪০-৩৪৩ (ঈষৎ পরিমার্জিত ও সংক্ষেপিত)]


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটেগরির আরো খবর
Theme Created By AR.Host