মহিদুল ইসলাম:
কয়েকদিনের বিরামহীন প্রবল বৃষ্টিপাতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলা সদরের
উত্তর কদমতলা এলাকার সহস্রাধিক পরিবার। পুকুর, রাস্তা, মাঠঘাট সব তলিয়ে গেছে পানিতে। পানি
নিষ্কাশনের জন্য ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন বাসিন্দারা।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, এই এলাকার বেশিরভাগ বাড়ির উঠানে পানি জমে আছে। নিম্নবিত্ত বহু পরিবারের
রান্নার চুলায় এবং ঘরের মধ্যেও পানি উঠে গেছে। রান্নাবান্নাও করতে পারছেন না অনেকে। চারিদিক পানিতে
ডুবে থাকায় কাচা ঘরবাড়িতে সাপকোপ, কেঁচো, পোকামাকড় ঢুকে পড়ছে। এমন পরিস্থিতে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে
জনজীবন। এছাড়া উপজেলার কেন্দ্রীয় খেলার মাঠটি হাঁটু সমান পানিতে তলিয়ে থাকায় খেলাধুলাও বন্ধ হয়ে
গেছে।
ভুক্তভোগীদের মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মো. আজাহার আলী, ব্যবসায়ী আ. আলীম, বাবুল হাওলাদার ও
আসলাম হোসেন বলেন, পানি নামার সব ডোবা, নালা ভরাট করে অপরিকল্পিতভাবে নতুন নতুন বাড়িঘর নির্মাণ
করা হয়েছে। যে কারণে আমরা ডুবে মরছি। কয়েক বছর ধরে বর্ষা মৌসুম এলেই এই দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
এখানে ড্রেন হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু জায়গার অভাবে তা হয়নি। কেউ জায়গা ছাড়তে চায় না। প্রশাসন
কঠোরভাবে উদ্যোগ নিয়ে জায়গা বের করে ড্রেন নির্মাণ না করলে সারাজীবন আমাদের এই দুর্ভোগ পোহাতে
হবে।
সাবেক ফুটবল খেলোয়াড় আশীষ কুমার দাস, ওহিদুজ্জামান ডালিম ও আ. কাদের বলেন, বর্ষা মৌসুমে উপজেলার
কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে হাঁটু পানি জমে থাকে। খেলাধুলার কোনো উপায় থাকে না। বর্তমানে পুরো মাঠে পানি থই
থই করছে। জলাবদ্ধতার কারণে মাঠের একাংশে কচুরিপানা জন্মেছে। দেখলে মনে হয় এটা কোনো বদ্ধ পুকুর।
দ্রুত মাঠের পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে খেলাধুলার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবি জানান সবেক এই
খেলোয়াড়েরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, শরণখোলা থানা এবং আরকেডিএস বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের পেছনের
উত্তর কদমতলা নামক এলাকাটিতে এক সময় ফাঁকাফাঁকা বাড়িঘর ছিল। সব মিলিয়ে পরিবার ছিল পাঁচ থেকে
ছয়শো। কিন্তু ৭-৮ বছরের ব্যবধানে বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষজন এসে ফাঁকা জমি কিনে বাড়িঘর নির্মাণ
করায় এখন সেই পরিবারের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে হাজারেরও বেশি। নতুন নতুন বাড়িঘর হওয়ার কারণে পানি
নিষ্কাশনের সমস্ত নালা-ডোবা ভরাট হয়ে গেছে। ফলে সামান্য বৃষ্টি হলেই সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা।
বিগত সরকারে আমলের শেষের দিকে জলাবদ্ধতা নিসরনে ড্রেন নির্মাণের জন্য এলজিইডি থেকে আড়াই কোটি
টাকার একটি প্রকল্প গ্রহন করা হয়েছিল। কিন্তু ড্রেন নির্মাণের জায়গা না পাওয়ায় সেই প্রকল্পটিও বাতিল
হয়ে যায়।
এব্যাপারে জানতে চাইলে শরণখোলা উপজেলা প্রকৌশলী মো. ফেরদৌস আলম বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে ড্রেন
নির্মাণের জন্য আড়াই কোটি টাকার প্রকল্পটি জায়গার অভাবে করা সম্ভব হয়নি। এখন স্থানীয়রা নিজেদের
উদ্যোগে পাইপ বসিয়ে যদি পানি সরাতে পারেন, তা না হলে এই মুহুর্তে নতুন কোনো প্রকল্প নেওয়ার সুযোগ
নেই। #