মো, খলিলুর রহমান শাহিন, বরগুনা জেলা প্রতিনিধি:
ইলিশ বাঙালির জাতীয় গর্ব, ভোজের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ। কিন্ত দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মৎস বন্দর পাথরঘাটায় হলেও এই এলাকার ৯৫ শতাংশ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার সাধ্যের বাইরে চলে গেছে ভিন্ন স্বাধের ইলিশ মাছ। এতে করে এ এলাকার হাতে গোনা দুএকজনে ইলিশ মাছ ক্রয় করতে পারলেও সাধারণ মানুষেরজন্য শুধুই স্বপ্ন। বর্তমানে বাজারে এক কেজি ওজনের একটি ইলিশের দাম কমপক্ষে পঁচিশশত টাকা। এই মাছ পেতে হলে একজন কৃষককে দিতে হয় দুই মনেরো বেশি ধান। এখন ইলিশের ভরা মৌসুম হওয়া সত্বেও বাজারে ইলিশের দাম এতটাই বেড়েছে যে বাংলাদেশের জাতীয় মাছ ইলিশ এখন গরিব ও স্বল্প আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। ফলে ধীরে ধীরে উৎসবের খাবার থেকে বিলাসী খাদ্যে পরিণত হচ্ছে ইলিশ।
ইলিশ শুধু মাছ নয়, বাঙালির আবেগ, সংস্কৃতি আর ইতিহাসের অংশ হলেও মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারগুলোর খাবারের তালিকায় এখন আর ইলিশ থাকে না। বর্ষায় ঘরে ঘরে ইলিশ রান্নার গন্ধ এখন আর ছড়িয়ে পড়ে না। ইলিশের স্বাদ নেয়া এখন সাধারণ মানুষের জন্য সুধুই স্বপ্ন। দুই মনের বেশি ধানের বিনিময়ে এক কেজি ইলিশের এই হিসাবটা শুধু অর্থের নয়, এটি দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্যের প্রতিচ্ছবি।
দেশের সর্ব দক্ষিণের উপকূলীয় অঞ্চল বরগুনার পাথরঘাটা। এখানে অবস্থিত দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র। প্রতিদিন কয়েশত সামুদ্রিক ট্রলার মাছ শিকার শেষে বিক্রির জন্য এখানে নিয়ে আসেন। বন্দরে প্রতিদিন কয়েকশত মেট্রিক টন ইলিশ কেনা-বেচা হলেও এই অঞ্চলের মধ্যবিত্ত ও নিন্ম আয়ের মানুষের ভাগ্যে জুটে না স্বাদের ইলিশ। স্থানীয় বাজারে দুই মন ধান বর্তমান বাজার মূল্য প্রতি কেজি ৩০ টাকা দরে চব্বিশশত টাকা। অর্থাৎএক কেজি ইলিশের জন্য খরচ হচ্ছে পচিঁশশত টাকা বা তারও বেশি। একজন দিনমজুর বা ক্ষুদ্র কৃষকের জন্য এ টাকা জোগাড় করা মানে এক মাসের খাবার বন্ধ করে দেওয়া।শহরের কিছু ধনী মানুষরা ইলিশ কিনে খেতে পারলেও গ্রামের সাধারণ মানুষরা ইলিশের স্বাদ থেকে বঞ্চিত। ইলিশ এখন যেন সাধারণ মানুষের জন্য ‘পানির ছবি’ দেখা গেলেও ছোঁয়া যায় না। জাতীয় মাছ যদি কেবল ধনীদের খাদ্য হয়ে ওঠে, তবে সেটি বাঙ্গালী জাতীর গর্বের নয়, বরং লজ্জার।
আবদুর জব্বার নামে একজন কৃষক বলেন, এক কেজি ইলিশ কেনার জন্য দুইমন ধানের চেয়েও বেশি বিক্রি করতে হয়। এত কষ্টে মাঠে কাজ করি, ফসল ফলাই, কিন্তু বছরে একটি ইলিশ ওমুখে তুলতে পারি না। ওটা এখন ধনীদের খাবার, আমরা শুধু টিভিতেই দেখি। বাজারে গিয়া দাম শুনলেই হাঁসফাঁস লাগে। ৫-৬ জনের সংসারে দুই হাজার পাঁচশত টাকায় শুধু একটা মাছ কিনলে তো আর অন্য বাজার করা যায় না। যে কারণে ইলিশের ধারে কাছেও আমরা যেতে পারি না।
রুপদোন বন্দর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুখরঞ্জন দাস বলেন, আমাদের এলাকায় ইলিশের উৎপাদন হলেও ইলিশ খাওয়া এখন স্বপ্নের মত। এ বছর ইলিশ এখনও কিনতে পারিনি। এক কেজি ইলিশ কিনতে আমার বেতনের তিনদিনের টাকা দিতে হয়। ইলিশ জাতীয় মাছ হলেও এর স্বাদ আমরা পাইনা। সরকার যদি নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে ইলিশ একদিন শুধু জাদুঘরের মাছ হবে।
শুক্রবার (০৫-০৯-২৫) বরগুনা জেলা মৎস্যজীবি ট্রলার মালিক সমিতি সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী কথা প্রসঙ্গে বলেন ইলিশের ভরা মৌসুম হলেও এ বছর এখন পর্যন্ত ইলিশ মাছ খেতে পারি নাই।
দাম বাড়ার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, জেলেদের জালে ইলিশ ধরা পড়লেও জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি, পরিবহন খরচ এবং বাজারে সিন্ডিকেটের কারণে দামের ওপর চাপ তৈরি হচ্ছে। পাইকারি পর্যায়েই কয়েকশ টাকা বাড়তি যোগ হচ্ছে, যা সরাসরি ভোক্তার কাঁধে পড়ছে।বাজারে কড়ানজরদারি থাকলেও সিন্ডিকেটের কারণে কার্যকর ভাবে দাম নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না বলে মনে করছেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
পাথরঘাটা উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো,হাসিবুল হক বলেন অবৈধ ট্রোলিং ট্রলার ও ছোট ফাসের জাল দিয়ে কিছু অসাধু মৎস্যজীবীরা সারা বছর মাছ শিকার কারণে যার কারনে সাগর ও নদ নদীতে ইলিশ মাছের স্বল্পতা দেখা দিচ্ছে ।
শের-ই বাংলা কৃষি বিশবিদ্যালয়ের (কৃষি ও অর্থনীতি) বিভাগের অধ্যাপক ড. রিপন কুমার মন্ডল বলেন, বর্তমানে ইলিশ মাছ একটি বিলাস পণ্য হয়ে উঠেছে। এটি এখন আর সার্বজনীন কোনো খাবার নয়। বাজারে মধ্য স্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম, নিয়ন্ত্রণহীন রপ্তানি এবং পর্যাপ্ত বাজার তদারকির অভাবে সাধারণ মানুষ ইলিশ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। শুনতে অবাক লাগে, যে এলাকায় ইলিশের উৎপাদন হয় সেই এলাকার মানুষ ইলিশের স্বাদ পায় না। সরকার চাইলে স্বল্প সময়ের জন্য ইলিশের রপ্তানি সীমিত করে উৎপাদিত এলাকার নিম্নআয়ের জনগোষ্ঠীর জন্য রেশনিং পদ্ধতির মাধ্যমে ইলিশ বাজার ব্যবস্থা চালু করতে পারে। এতে দামের ভারসাম্যই আনবে না, বরং নিম্ন আয়ের মানুষের খাদ্য অধিকার নিশ্চিত করবে।
প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান সম্পাদক : শেখ মোহাম্মদ আলী।
সম্পাদক ও প্রকাশক :শেখ হাসান আল মাহমুদ
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক :মারুফা আলী
রায়েন্দা বাজার, শরণখোলা জেলা বাগেরহাট থেকে প্রকাশিত।
মোবাইল নম্বর ০১৭১১৯০৪২০৭,০১৩১৪০৯২৪৮৭।
ই-মেইল- sarankholadarpan@gmail.com
স্বত্ব © ২০২৫ শরণখোলা দর্পণ